মুখমণ্ডলের হাড় ভেদ করে টেঁটার ফলা ঢুকে গেছে মস্তিষ্কের পাঁচ সেন্টিমিটার গভীরে। অবস্থান একেবারে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের প্রধান রক্তনালি ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারি থেকে কয়েক মিলিমিটার দূরে, মাস্টারগ্লান্ড পিটুইটারির ঠিক নিচে। রক্তনালিতে আঘাত হলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দাঁড়াতো শূন্যের কোঠায়। এমন বিপজ্জনকভাবে বিদ্ধ এক রোগীর মুখমণ্ডল থেকে সফলভাবে টেঁটা অপসারণ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
আক্রান্ত রোগী মো. আশরাফুল (২৬) নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। সংঘর্ষে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার সফল অস্ত্রোপচারের তথ্য জানায়।
এর আগে গত ১২ মার্চ ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও নিউরোসার্জারি ভায়োলেট ইউনিট প্রধান ডা. কানিজ ফাতেমা ইশরাত জাহান রিফাতের নেতৃত্বে অত্যন্ত জটিল এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।
ঘণ্টাব্যাপী চলা অস্ত্রোপচারে আরো ছিলেন একই বিভাগের ডা. কাজী ইরফান সোবহান, ডা. গাজী হাবিবুল্লাহ, ডা. শুভ্র সাহা, ডা. হাসান, ডা. পুনম রায় এবং অ্যানেস্থিশিওলজিস্ট ডা. আল বিরুনী।
জানা গেছে, ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জ থেকে এক ব্যক্তি টেঁটাবিদ্ধ অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ভায়োলেট ইউনিটে আসেন।
তার ডান চোখের নিচ দিয়ে টেঁটার একটি ফলা প্রবেশ করে মুখমণ্ডলের হাড় এবং বায়ু কুঠুরি ভেদ করে মস্তিষ্কের মাস্টারগ্লান্ড পিটুইটারির ঠিক নিচে অবস্থান করছিল। সিটি স্ক্যান পরীক্ষার মাধ্যমে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের প্রধান রক্তনালি ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারি থেকে কয়েক মিলিমিটার দূরে এর অবস্থান শনাক্ত করা হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই রক্তনালির ইনজুরিতে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকটা শূন্যের কোঠায় পৌঁছায়। এমন জটিল একটা পরিস্থিতিতে রোগীর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগ, অ্যানেস্থিশিয়া বিভাগ এবং চক্ষু বিভাগ রোগীটির অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়।
পরে এক ঘণ্টার চেষ্টায় কোনো রকমের মস্তিষ্ক, রক্তনালি কিংবা চোখের ইনজুরি ছাড়াই সফলতার সঙ্গে অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয়। গতকাল মঙ্গলবার রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে অস্ত্রোপচার দলের সদস্য ডা. গাজী হাবিবুল্লাহ বলেন, একটি ফলা চোখের ঠিক নিচ দিয়ে মস্তিষ্কের ভিতরে প্রায় ৫ সেন্টিমিটার ঢুকে গিয়েছিল। এর প্রান্তটা ছিল একেবারে মস্তিষ্কের কেন্দ্রের কাছে।
তিনি বলেন, টেঁটা মূলত মাছ ধরার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হয়। এজন্য এর ফলার মাথায় বড়শির মতো একটি অংশ থাকে, মাছকে বিদ্ধ করার পর টান দিলে যেন খুলে চলে না আসে। ফলার এই প্রান্তটি রোগীর মস্তিষ্কে প্রবেশের পর একটি হাড়ের সঙ্গে আটকে গিয়েছিল। এর কারণে এটি একটু জটিল আকার ধারণ করে। যদিও ফলা গোল হলে সহজেই বের করা যেত।
ডা. গাজী হাবিবুল্লাহ আরও বলেন, বেলা ১২টার দিকে রোগী নিউরোসার্জারি ভায়োলেট ইউনিটে আসেন। অস্ত্রোপচার শুরু হয় ৫টা ৪৫ মিনিটে। অপারেশন থিয়েটারেই ইফতার সারেন সার্জনরা। এক ঘণ্টার কম সময়েই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। রোগী এখন ভালো আছে, আলহামদুলিল্লাহ। মস্তিষ্কের বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৯ মার্চ টেঁটার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত বাদশা আলীর মুখমণ্ডলের অস্ত্রোপচার করেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইদের সঙ্গে সংঘর্ষে তার অক্ষি কোটরে ঢুকে গিয়েছিল টেঁটার ফলা।
আরেকটি ফলা গিয়ে ঢুকেছিল মুখ বরাবর। রমেক হাসপাতালের ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল বিভাগে ওই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। দেড় ঘণ্টার ওই অস্ত্রোপচারে নেতৃত্বে দেন ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন ডা. আরিফুল ইসলাম।