ঢাকার ধামরাইয়ে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের ঢুলিভিটা এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারান ইতি নামে একটি মেয়ে। তখন সে ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। ইতি আক্তার উপজেলার বড় চন্দ্রাইল এলাকার মো. লিয়াকত আলীর মেয়ে।
জানা যায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ইতি আক্তার চার বছর পূর্বে ২০১৭ সালে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সকালে রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাকের চাপায় তার একটি পা হারায়। অসহায় পরিবারের সন্তান হওয়ার পরও স্বপ্ন পূরণের আশায় পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে ইতি। ইতি বর্তমানে আব্দুস সোবহান মডেল স্কুলের ১০ শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু কারো নজরে আসেনি ইতি নামক এই মেয়েটির পা হারানোর পঙ্গুত্ব জীবন।
ইতি আক্তার বলেন, পঙ্গুত্বই আমার চলার পথে খুড়িয়ে চলায় তার আনন্দ টুকু কেড়ে নিয়েছে। তার সহপাঠীদের খেলা আর দৌড়ানো মুহূর্তগুলো প্রচণ্ড শুন্যতা অনুভব করি। মনে করেছিলাম জীবনে আর কোনো দিন হাটতে পারবো না। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু মনোবল হারায়নি। পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি, বর্তমানে ১০ম শ্রেণিতে পড়ছি।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ধামরাই শাখার উদ্যোগে একদিন সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সচেতনতামূলক ক্লাস করতে আব্দুস সোবহান মডেল স্কুলে যাওয়ার পর ঘটনার পেক্ষাপটে ইতি আক্তারের কান্নার দৃশ্য চোখে পড়ে সকলের।
এ বিষয়ে ইতি আক্তারকে প্রশ্ন করা হলে সে আর তার মর্মান্তিক ঘটনাটি বলতে পারেনি শুধু কান্নাই করে যাচ্ছে। কোন কথা বলতে পারেনি। হঠাৎ করে শ্রেণি কক্ষটি নীরব হয়ে যায়। সহপাঠীরা আবেগে আপ্লুত। সেই দৃশ্য দেখে নিরাপদ সড়ক চাই ধামরাই শাখার সদস্যরা তার তথ্য সংগ্রহ করে। কিভাবে তার একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর সদস্যরা ইতি আক্তারের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারে, ইতির বাবা ঢাকা আরিচা মহাসড়কে চলাচল করা যাত্রীসেবা পরিবহণের চালক। পারিবারিক অবস্থা সচ্ছল নয়।
এক পর্যায়ে নিসচা’র সদস্যদের সহযোগিতায় ইতি আক্তারকে সাভারের সি.আর.পি হাসপাতালে ভর্তি করে ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে ইতির জন্য একটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দেন নিরাপদ সড়ক চাই এর সদস্যরা।
ইতি আক্তারের বাবা লিয়াকত আলী বলেন, নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের লোকজন আমার মেয়েকে অনেক সহযোগিতা করেছে। তাকে সাভার সি.আর.পি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন এবং একটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমার তিন সন্তানের মধ্যে ইতি দ্বিতীয়। সে খুবই সাহসী। পা হারানোর বেদনা থাকলেও পড়াশোনা বাদ দেয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা হালিম মিয়া বলেন, ইতি খুবই সাহসী মেয়ে। পা হারালেও সে তার পড়াশোনা বন্ধ করেনি। নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছে পড়াশোনা। যদিও তার বাবার আর্থিক অবস্থা বেশি ভালো নয়। ইতি সকলের মাঝে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
এ বিষয়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ধামরাই শাখার সভাপতি মো. নাহিদ মিয়া বলেন, আমরা নিরাপদ সড়ক চাই ধামরাই শাখার উদ্যোগে আব্দুস সোবহান মডেল স্কুলে সড়কে চলাচলের নিয়ম কানুন সম্পর্কে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করার সময় ইতির কান্নার দৃশ্য আমার চোখে পড়লে আমি বক্তব্য বন্ধ করে তার বিষয়ে জানতে চাইলে ইতি আক্তার সেই করুণ মর্মান্তিক ঘটনাটি আর বলতে সক্ষম হয়নি।
এমতাবস্থায় শ্রেণিকক্ষ নীরব সুনশান হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ইতির সকল তথ্য নিয়ে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে তার পরিবারের সম্মতিক্রমে সাভারের প্রক্ষাঘাত কেন্দ্র সি.আর.পি হাসপাতালে যোগাযোগ করে নিসচা ধামরাই শাখার অর্থায়নে ইতি আক্তারকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা সম্পূর্ণ করে তাকে কৃত্রিম পা তুলে দেয়া হয়। বর্তমানে ইতি আক্তার সেই পায়ে ভর করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সোবহান মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তার বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ইতি আক্তার নামে আমাদের এক ছাত্রীর একটি পা হারালেও সে তার অধম্য সাহস নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সকলকেই তিনি রাস্তা পারাপারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করে চলাচল করতে বলেন। ইতির মতো যেন আর কারো এমন দুর্ঘটনা না ঘটে। নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের সদস্যরা আমার স্কুলে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করতে এসে ইতির দেখা পায়। তারা একটি কৃত্রিম পা তাকে উপহার দেন।