করোনার কারণে এবারের দুর্গাপূজায় আরোপ করা হয়েছে অনেক রকম বিধিনিষেধ। নানা আনুষ্ঠানিকতায় কাটছাট করে অনাড়ম্বর পূজার প্রস্তুতি কিশোরগঞ্জের সবখানে। কিন্তু ঢাক-ঢোলের বাজনা ছাড়া যে দুর্গাপূজা পূর্ণতা পায় না। মহাষষ্ঠী থেকে বিসর্জন-সবখানেই চাই ঢাকের আওয়াজ। এ কারণে স্থাস্থ্যবিধির বেড়াজালের মধ্যেও জেলার কটিয়াদীতে প্রতিবছরের মতো আজ বুধবার থেকে বসেছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট। যা চলবে সপ্তমীর দিন পর্যন্ত।
দুর্গাপূজার শুরু থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত মণ্ডপগুলোতে ঢাকের বাজনার রেওয়াজ আছে। সেই রেওয়াজের ধারাবাহিকতা ঠিক রাখতেই পূজার আয়োজকরা কটিয়াদীতে চলে আসেন ঢাক-ঢোল ভাড়ার জন্য। এ হাটে কোনো বদ্যযন্ত্র বিক্রি হয় না। কেবল পূজা চলাকালীন ঢাকিরা আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। তবে কোন দলের কত দাম হবে, তা নির্ধারণ হয় তাৎক্ষণিক বাদ্যবাজানোর দক্ষতার পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে। শুধু বাদ্য বাজানো নয়, বাজনার তালে তালে নাচ আর নানা ঢঙ্গে অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনও তাদের পেশার অংশ, যা দিয়ে তারা পূজারিদের আকৃষ্ট করে।
বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কটিয়াদীর পুরান বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতি বছরের মতন এবারও ঢাকীদের সরব উপস্থিতি। তবে করোনার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ঢাকীর সংখ্যা তুলনামূলক হারে কম। এবার ঢাকার বিক্রমপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে আসা ঢাকীর সংখ্যাই বেশি।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবার দলগতভাবেই বিভিন্ন পূজা আয়োজকদের সাথে তাদের চুক্তি হয় তাদের। তবে এবারের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে তারা নিজেদের মত করেই যাদের সাথে দরদামে মিলবে তাদের মন্ডপেই বাজনা বাজাবে। প্রতিবার ১০ হাজার থেকে লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যায় তাদের চুক্তিমূল্য। তবে এবারের পূজোয় সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। তাই পূজোর দিনগুলোতে মোটামুটি পোষাবে এমন দামেই তারা বিভিন্ন মন্ডপে বাদ্যযন্ত্র বাজাবেন।
হাটের আয়োজকদের পক্ষে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, কটিয়াদী উপজেলা শাখার সভাপতি বেনী মাধব ঘোষ জানান, এ হাটে প্রতিবছরই প্রায় ৫০০ বাদকদল দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে অংশ নেন। কটিয়াদি পুরান বাজারে এ হাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা আয়োজক হিসেবে বাদকদল এবং যারা বায়না করবে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকি। তবে এবার করোনা ভাইরাসের কারণে বাদকদের উপস্থিতি অনেকটাই কম। আবার হাটে আসা সকল বাদকরাই চুক্তিবদ্ধ হতে পারে না। তখন তাদেরকে গাড়িভাড়া দিয়ে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করি।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন