সাভারের আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকদের হিজাব পরে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) সকালে আশুলিয়ার গাজিরচট এলাকায় অবস্থিত ‘ইয়াংজিন ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড’ কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সকাল থেকেই কারখানার সামনে প্রায় ৬০ জন বোরকা ও হিজাব পরিহিতা শ্রমিক অবস্থান করছেন।
তারা জানান, কারখানায় সব কিছু ঠিক ঠাকই চলছিল। গত দেড় মাস যাবত আমাদের সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষ ঝামেলা করছে। এ সময় হিজাব পরার কারণে অনেক শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। আর যারা হিজাব বা বোরকা পড়ে কাজ করে তাদের বেতনও কেটে রেখেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। শনিবার বোরকা ও হিজাব পরিহিত শ্রমিকরা সকালে কারখানায় গেলে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
দুই বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করে পারুল নামে এক শ্রমিক। তিনি বলেন, হঠাৎ দেড় মাস ধরে হিজাব ও বোরকা পরা নিয়ে ঝামেলা করছে স্যাররা। আমি আগে প্রতি মাসে বেতন পেতাম ১২/১৪ হাজার টাকা, গত মাসে আমাকে বেতন দেয় ৭ হাজার টাকা। আমরা নির্ধারিত সময়ের চেয়েও বেশি কাজ করি।
তিনি বলেন, ‘শুধু তাই নয়, ঈদ বোনাস যেখানে পাবার কথা বেতনের অর্ধেক, সেখানে খুবই অল্প টাকা দেয়। আজ (শনিবার) কারখানায় ঢুকতে গেছি, যারা বোরকা বা হিজাব পরে এসেছি সবাইকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখছে, ঢুকতে দেয়নি। স্যাররা বলেছেন যদি বোরকা খুলতে পারো, তাহলে ভেতরে আসো। এর আগে কারখানার স্টাফ সুপারভাইজার ফেরদৌস ভাইকে দিয়ে আমাদেরকে চাপ দিয়ে বোরকা খোলানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ফেরদৌস ভাই তা করেনি দেখে তাকেও আমাদের সঙ্গে বের করে দিয়েছে কারখানা থেকে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বেতন পাই অল্প, বাড়িতে বাবা-মাকে দিতে হয়, এখানে বাসাভাড়া দিতে হয়, নিজের খাবার খরচ চালাতে হয়। এত অল্প টাকায় কি ঢাকায় কাজ করে চলা যায়? আর এই চাকরিটা যদি চলে যায় ঈদের সামনে আমি কি করব? কোথায় গিয়ে চাকরি নেব?
বিষয়টি নিয়ে কারখানার সুপারভাইজার মো. ফেরদৌস হোসেন তালুকদার বলেন, আমি তিন বছর ধরে এই কারখানার কাজ করি। প্রায় দেড় মাস হলো হিজাব না পরার এই কার্যক্রম কারখানার ভেতরে চলছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাকে প্রথমে বলছে আমার আন্ডারে যে শ্রমিকরা রয়েছে সবাইর হিজাব খুলে ফেলার জন্য। পরে আমি না কারলে ২০ হাজার টাকাসহ প্রায় ৭০ জন শ্রমিক মাথাপিছু ২০০ টাকা করে দেওয়ার কথা বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমি একজন মুসলিম হিসেবে এটা করতে পারিনি। তাই কারখানায় আজ শ্রমিকদের সঙ্গে আমাকেও ঢুকতে দেয়নি। শুধু তাই নয়, হিজাব পরিহিতা শ্রমিকদের গত মাসের বেতন কম দিয়েছে।
হিজাবের বিষয়টি অস্বীকার করে কারখানাটির এইচ আর অ্যাডমিন (প্রশাসনিক কর্মকর্তা) ইমরান হাসেম বলেন, আসলে বোরকা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তবে আমাদের উপর থেকে নির্দেশ ছিল হিজাব খুলে যেন শ্রমিকরা মাস্ক পরে। এটি শ্রমিকদের জানালে তারা হিজাব খুলবে না বলে জানিয়ে দেয়। পরে আমরা আর কিছু বলিনি। আজকের সমস্যা হলো বেতন-বোনাস। শ্রমিকরা কাজের রেট বাড়িয়ে চায়। আমরা পুলিশ ও শ্রমিকদের নিয়ে বসেছি বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এ ব্যপারে স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আল কামরান বলেন, বিষয়টি ন্যক্কারজনক। ঘটনাটি শোনার পরপরই কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলার চেষ্টা করি। কারখানা কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে শ্রমিকদের অনেক ক্ষতি হয়। এই কারখানায় প্রায় ১২শ শ্রমিক কাজ করে। বাকি শ্রমিকদের ভেতর যারা হিজাব পরতো তাদের সুপারভাইজার দিয়ে চাপ দিয়ে হিজাব খুলিয়েছে। একজন সুপারভাইজার এটা না করায় তাকেও আজ বের করে দেওয়া হয়েছে৷ এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।