English

22 C
Dhaka
শনিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
- Advertisement -

যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব শত শত পরিবার

- Advertisements -

নামমাত্র আর্থিক সাহায্য নয়, চান স্থায়ী বাঁধ। যাতে সন্তান পরিবার নিয়ে শান্তিতে বাস করতে পারেন। রাক্ষসী যমুনার তীরবর্তী ভাঙনের শিকার অসহায় মানুষ আর প্রতিশ্রুতি চান না। চান বাস্তবায়ন। কিন্তু তাদের করুণ আর্তনাদ যেন দেখার কেউ নেই। বর্ষা এলেই যমুনা নদীর তীরবর্তী টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও ভূঞাপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের জীবনে নেমে আসে বিভীষিকা। তারা থাকেন চরম আতংকে, কখন যেন বাড়িঘর চলে যায় আগ্রাসী যমুনার পেটে। ঠাঁই নিতে হয় খোলা আকাশের নিচে বা অন্যের জায়গায় আশ্রিত হয়ে থাকতে হয়। এবারো সেই দৃশ্যের ব্যতিক্রম নয়।

ভাঙন রোধে সাময়িকভাবে ফেলা বালুর বস্তা কাজে দেয় না। এছাড়া ব্লক দিয়ে বাঁধানো নদীর পাড় টেকসই হয় না। দেবে গিয়ে আবার ভাঙন ধরে।

বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের বেলটিয়া গ্রামের আছিয়া বেগম বলেন, নদী সব কিছু কাইরা নিছে। চারবার বাড়ি ভাঙছি।

মর্জিনা বেগম বলেন, আমাগো এখন যাবার জায়গা নাই। আমরা ভাসমান। সরকার থিকা কিছই পাই না।

Advertisements

আলীপুর গ্রামের মামুন মাস্টার বলেন, আমাদের গ্রামের সিংহভাগই নদীতে চলে গেছে। গ্রামের দাখিল মাদ্রাসা, মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাহ মাঠ ও বাজার সবই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমার বাড়িসহ এবারো শতাধিক বাড়ি ভেঙেছে। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।

ভাঙনের শিকার আজিজ মিয়া বলেন, আমাগো পাকা ঘরবাড়ি ও টয়লেট সব ছিল। আমাগো অবস্থা এতো খারাপ আছিল না। এখন বাঁইচা আছি এটাই কষ্টের।

তরিকুল ইসলাম বলেন সরকার থেকে অনুদানের টাকা দেওয়া হয়। যাদের বাড়ি ভাঙে নাই এমন লোকও সাহায্য পায়।

ক্ষোভের কণ্ঠে অনেকেই বলেন, আপনারা ত প্রতিবারই লেইখা নিয়া যাইন। আমাগো কোন লাব অয় না তো। আমরা ছিলাম এলাকার বড় গিরস্থ। কিন্তু যমুনা নদীই আমাদের সর্বনাশ করে দিছে। আজ নিঃস্ব। অনেকেই অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরপৌলী, কাকুয়া, ধুলবাড়ী, পানাকুড়া, কালিহাতী উপজেলার গড়িলাবাড়ি, বেলটিয়া, আলীপুর, শ্যামসৈল, বিনোদ লুহুরয়িা, ভৈরববাড়ী, বেনুকুর্শিয়া এবং  ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা, অর্জুনা নিকরাইল ও অলোয়া ইউনিয়নের বহু গ্রামের মানুষ প্রতিবছরই নদী ভাঙনের শিকার হন। এছাড়া নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলায়ও হয় নদী ভাঙন।

ভুক্তভোগীরা জানান, তীব্র স্রোত, অবৈধ বালু উত্তোলন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিই এর জন্য দায়ী।

Advertisements

গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন এই এলাকার মানুষকে বাঁচালে হলে দ্রুত স্থায়ী বাঁধই নির্মাণ করতে হবে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) এর বঙ্গবন্ধু সেতুতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, সেতু তীরবর্তী আমাদের এরিয়ায় ব্লক দিয়ে বাঁধ করা হয়েছে।

সেতুর ৬ কিলোমিটারের মধ্যে নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলার কয়েকটি উপজেলায় প্রতিবছরই অসংখ্য মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হন। টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর এবং ভূঞাপুরে নদী ভাঙ্গন রোধে গাইড বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্পের প্রপোজাল তৈরি করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। করোনার কারণে গত দুই বছর অগ্রগতি হয়নি।

টাঙ্গাইল সদর আসনের এমপি আলহাজ্ব মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, চরপৌলী গ্রামেই কয়েকশ ভিটে বাড়ি নদীতে চলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের এবার ২০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান দেওয়া হয়েছে। নদী ভাঙণ রোধে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলার ১৫.৩ কিলোমিটার বাঁধের ব্যবস্থা হবে।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন