দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে রোববার বিকেলে চট্টগ্রামে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ মিছিল বের করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন। এর আগে নগরের প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, স্বাধীনতা–পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার আলোর মুখ দেখেনি। এবার দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি জানান তাঁরা।
বেলা সাড়ে তিনটায় অনুষ্ঠিত কর্মসূচির মূল আয়োজক ছিল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি। এতে রামকৃষ্ণ মিশন, সৎসঙ্গ আশ্রম, কৈবল্যধাম, তুলসী ধাম, গীতা সংঘ পূজা উন্যাপন পরিষদসহ নগর এবং নগরের বাইরের বিভিন্ন সনাতনী মঠ মন্দির, সংঘ, যুব সংগঠন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে অংশগ্রহণ করে। এ সময় সমাবেশটি জামালখান মোড় থেকে জামালখানের সিকদার হোটেল এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
চট্টগ্রাম ইসকন বিভাগীয় সম্পাদক শ্রীপাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে ও বিপ্লব দের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তব্য দেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক চন্দন তালুকদার, ইসকন প্রবর্তকের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌরদাস ব্রহ্মচারী, মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য, বাগীশিকের প্রধান উপদেষ্টা তপন কান্তি দাশ প্রমুখ।
সমাবেশে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘নোয়াখালী হলো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এলাকা। আরও অনেক বড় বড় নেতা রয়েছেন সেখানে। কিন্তু সেখানে মানবতা বিপন্ন হলো। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন যদি সহযোগিতা করত, পাশে দাঁড়াত, তাহলে সেখানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটত না। রক্ত ঝরত না।’
মিছিলকারীরা শহরের কলেজ রোডে ঢুকে আশপাশের অনেক দোকানে এবং রামঠাকুর আশ্রম, রাধা মাধব জিওর মন্দির, ইসকন মন্দিরসহ প্রায় সব মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর চালান। এ সময় অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এ ছাড়া বাড়িঘর লক্ষ্য করে প্রচুর ইটপাটকেল ছোড়া হয়। বিক্ষোভকারীরা মন্দিরের সামনে ও আশপাশে থাকা হিন্দুদের পিটিয়ে আহত করেন।
চট্টগ্রামের সমাবেশে বক্তারা বলেন, এটা সরকার পতনের আন্দোলন নয়। এটা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন। এখন সময় এসেছে রুখে দাঁড়ানোর। সব ধর্মীয় সংগঠন ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে হবে। তাঁরা আরও বলেন, গুটি কয়েক মানুষ হামলায় জড়িত। সব সাধারণ মানুষ হামলাকারী নয়। তাদের বিচার করা হোক।
সমাবেশ শেষে পাঁচটায় বিশাল একটি মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল। আন্দরকিল্লায় মিছিলের অগ্রভাগ পৌঁছে যাওয়ার পরও জামালখান মোড়ে তখনো মিছিলের পেছনের অংশ ছিল। বিভিন্ন বয়সী নারী–পুরুষ মিছিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলে প্রতীকী লাশও বহন করা হয়।