দুদিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ভারি বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পাঁচ রোহিঙ্গাসহ মারা গেছেন ১২ জন। এছাড়াও পানিতে ডুবে এবং ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গেছেন আরো সাত জন। দুদিনে প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলায় মোট ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে বুধবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও ঈদগাঁও উপজেলায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এদের মধ্যে নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার দরগাহপাড়ার নাসি খালে ঢলের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে আজ বুধবার একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তারা মাছ ধরার জন্য খালে নেমে পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়।
নিহতরা হলেন- ইদগাঁও উপজেলার সদও ইউনিয়নের মধ্যম শিয়া পাড়ার বাসিন্দা মো. শাহজাহানের দুই ছেলে ফারুক (২৫) ও দেলোয়ার (১৬) এবং নাতি মোর্শেদ (১৫)। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্থানীয় এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ।
এদিকে, কক্সবাজারের টেকনাফে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া অফিস ৩২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। বর্ষণে কক্সবাজারের ৪১টি ইউনিয়নের ৪১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কক্সবাজারে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয় দিতে কাজ করছে ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। কক্সবাজারের দুর্যোগকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের জন্য চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান এনডিসি বুধবার সকালে কক্সবাজার এসে পৌঁছেছেন। তিনি উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির ও উখিয়ার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে জেলার ৪১টি ইউনিয়নের ৪১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে করে অর্ধ লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সাত হাজার ৬৫ পরিবারের লোকজনদের।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ১৫০ মেট্রিক টন চাল ও পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাহাড় ধসে মৃত্যুবরণকারী প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, এবার স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১৩ মিলি মিটার রেকর্ড করা হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা শিবিরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।