বাংলাদেশ নামক মানচিত্রের ৫০ বছরের আলােকিত অগ্রযাত্রা। তাইতাে দীপ্তিময় লাল-সবুজের পতাকার রঙ। বর্ণচ্ছটা আর বাহারী অবয়বে এ যেন একখন্ড বাংলাদেশ। সুর-ছন্দের মেলবন্ধনে ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাপারেলসে ধ্বনিত হল মহান মুক্তিযুদ্ধের জয়গাঁথা।
কারখানা মালিকের, উৎসব সকলের’-এমন একটি আবহ তৈরি হয়েছিল গতকাল ১২ জানুয়ারী ২০২২ বুধবার নাসিরাবাদ শিল্প এলাকাস্থ ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাপারেলস নামের পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর সােনালীক্ষণে দিনভর ছিল এই আনন্দ আয়ােজন। যার সবটাই ছিল দেশকে ঘিরে।
কারখানার শত শত শ্রমিক নেচে গেয়ে সামিল হয়েছিলেন উৎসবে। গার্মেন্টস কন্যারা করেছেন ফ্যাশন শো। কেউ ছিলেন স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর ভূমিকায়। মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন প্রত্যকেই। কারখানার প্রত্যেক শাখার জন্য ছিল ভিন্ন ভিন্ন পােশাক। সাজসজ্জার আয়ােজনও ছিল কারখানাতেই। অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে সময় নিয়েছে মাত্র ১৫দিন। এমন আয়ােজনে সামিল হতে পেরে খুশি শ্রমজীবী শিল্পীরাও। কারখানার মালিকের পরিবারের সদস্য-সদস্যাদের সরব উপস্থিতি। উপস্থাপনা থেকে শুরু করে গানের তালে তালে নৃতাসহ যাবতীয় পারফরমেন্স করেছেন। শিল্পীরা সবাই কারখানার শ্রমিক-কর্মচারী। সচরাচর পােশাক খাতে মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক খুব একটা মধুর হয় না। তৈরি পােশাক উদ্যোক্তা আবু তৈয়ব ভাঙতে চান সে বেড়াজাল। সাথে দূর করতে চান করােনার জড়তা। গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা মালিক-কন্যার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করে ভাইরাল হওয়া ইন্ডিপেন্ডেট অ্যাপারেলসের শ্রমিকেরা গতকাল সকলে চাঁদা তুলে সেই কন্যা এবং জামাতাকে সােনার আংটি উপহার নিয়ে কারখানায় স্বাগত জানিয়েছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘আনন্দ উৎসবের প্রতিটি আয়ােজনে ছিল দেশ, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুকেও বিভিন্নভারে উপস্থাপন করা হয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের গানে আর নৃত্যে।
নগরীর নাসিরাবাদ শিল্প এলাকাস্থ ইন্ডিপেডেন্ট অ্যাপারেলস নামের গার্মেন্টস মালিক, বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি ও চিটাগাং ক্লাবের সাবেক চেয়ারম্যান এবং নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি এস এম আবু তৈয়বের কারখানার সেই শ্রমিকরা দিনভর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আনন্দ উৎসবের আয়ােজন করেন। করােনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানার অভ্যন্তরে আয়োজন করা হয় আনন্দ-উৎসবের।
এ উপলক্ষে কারখানার ছাদে তৈরি করা হয় মঞ্চ। পতাকার রঙের লাল সবুজ কাপড়ের সামিয়ানা টাঙিয়ে বানানাে হয় প্যান্ডেল। উৎসবে কারখানার মালিক এস এম আবু তৈয়ব সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন। বিদেশ থেকে এসে উৎসবে যােগ দিয়েছিলেন মালিক-কন্যা সাইকা এবং তার স্বামী নিলয়। কারখানার শ্রমিকেরা বিখ্যাত নয়া দামাম গানটির সাথে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে সাইক ও নিলয়কে স্বর্ণের আংটি পরিয়ে দেন। এতে কারখানার দুই হাজারেরও বেশি শ্রমিক যোগ দেন অনুষ্ঠানে। দেশের গান, মুক্তিযুদ্ধের গান এবং স্বাধীনতার গানসহ নানা আয়ােজনে করা হয় আনন্দ উৎসব। আকর্ষণীয় ছিল ফ্যাশন শাে। একদল গার্মেন্টস কন্যা একেবারে প্রফেশনাল মডেলদের মতাে। নিখুঁতভাবে র্যাম্পে হাঁটুন, ক্যাটওয়াক করেন। লাল সবুজ শাড়ি পরে দারুণ ফ্যাশন শাে উপহার দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন গার্মেন্টস কন্যারা। কারখানার মালিক এস এম আবু তৈয়ব জানালেন এই অনুষ্ঠানের জন্য গত পনের দিনেরও বেশি সময় ধরে। তারা মহড়া করেছে। তারা কাজ করেছে, আবার কাজের ফাঁকে ফাকে আজকের এই দিনটিকে বর্ণিল করতে প্রয়ােজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে। কারখানা ছিল ছুটি আয়ােজন ছিল খাওয়া দাওয়াও। শ্রমিকেরা কারখানা অঙ্গনে উৎসবের মেজাজে খাবার খেয়েছেন, আর তাদের পরিবার পরিজনের জন্য প্যাকেটে ভরে বাসায় পাঠানাে হয়েছে খাবার।