কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে সরকার বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছে। চট্টগ্রামে গত রোববার থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দিন মাত্র এক হাজার ৯০ জন ভ্যাকসিন নিলেও প্রতিদিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে এই সংখ্যা। দ্বিতীয় দিনে ২ হাজার ৬৭৮ জন, তৃতীয় দিনে ৬ হাজার ৫৯ জন ও চতুর্থ দিনে ১০ হাজার ৩৬২ জন টিকা নিয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ৫ম দিনে চট্টগ্রামে টিকা নিয়েছেন ১৬ হাজার ৮০৫ জন।
এদিকে টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ বাড়ার পাশাপাশি টিকাকেন্দ্রেও ভিড় বাড়ছে। এতে নগরীর টিকাদান কেন্দ্রগুলো ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে কেন্দ্রগুলোতে আনসারের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশও রাখা হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার বুথে সুশৃংখলভাবে টিকা নিয়েছেন সকলেই। এই বুথে চিকিৎসকসহ প্রথম সারির করোনাযোদ্ধাদের টিকা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ছিল নারী পুরুষের দীর্ঘ লাইন। এখানে টিকা নিতে আসার লোকজন বুথ আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
প্রথম দফায় চট্টগ্রামে মহানগরীর জন্য এক লক্ষ ৫৪ হাজার ৯শ এবং উপজেলার জন্য ৩ লক্ষ ১ হাজার ১শ ডোজ টিকা আসে। একজনকে দুই ডোজ করে দেওয়া হবে। এতে দুই ডোজ করে দুই লাখ ২৮ হাজার মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়ান টিকা নিতে আসা লোকজন। নিবন্ধন করার জন্য মোবাইলে টিকা নেওয়ার সিডিউল না পেয়ে অনেকে আগেভাগেই টিকা নিতে চলে আসেন। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়ে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে দুপুরের দিকে টিকা গ্রহীতাদের লাইন হাসপাতালের দ্বিতীয় তলা থেকে মূল ফটক হয়ে রাস্তা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।
হাসপাতালে ভিড় বাড়ার কারণ হিসেবে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামের জন্য ৪ লাখ ৫৬ হাজার টিকা পেয়েছি। এর অর্ধেক প্রথম ডোজ এবং অর্ধেক দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে দেওয়া হবে। অর্থাৎ এসব টিকা মোট দুই লাখ ২৮ হাজার মানুষকে দেওয়া হবে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রথম ডোজ শেষ করার। এখন হয়তো ২০ তারিখ থেকে সময় একটু বেশি লাগতে পারে।
তিনি বলেন, জেনারেল হাসপাতালের জন্য প্রতিদিন ১২শ টিকা দেওয়ার টার্গেট রয়েছে। তবে আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) দিতে হয়েছে ১৯শ। কার্যত রেজিস্ট্রেশন করার পর সংশ্লিষ্টরা মোবাইলে ম্যাসেজ পাওয়ার কথা। কিন্তু এখন ‘ম্যাসেজ ইন’ অপশনটা কাজ করছে না। এতে যারাই রেজিস্ট্রেশন করেছেন তারাই টিকা নেওয়ার জন্য চলে এসেছেন। সিডিউল না জানার কারণে মানুষের ভিড় বেড়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ১২শ করে টিকা দেওয়ার কথা। ১২ দিনের জন্য সব রেজিস্ট্রেশন ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এখন আর কেউ এই দুই কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। সেই হিসেবে শনিবার থেকে ভিড় কম হতে পারে। কারণ নতুন নিবন্ধনকারী থাকছে না।
তিনি বলেন, প্রথমে বয়সসীমা ছিল ৫০ বছর। এখন কমিয়ে ৪০ করার কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে। তাছাড়া যতই দিন গড়াচ্ছে, ততই মানুষের মাঝে টিকা দেওয়ার আগ্রহ বাড়ছে। বর্তমানে আমাদের প্রত্যেক বুথে এক থেকে দেড়শ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা। কিন্তু ভিড় সামাল দিতে আমরা দুইশ’র কাছাকাছি টিকা দিচ্ছি। সেই হিসেবে মানুষকে লাইনে রেখে টিকা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তারপরেও প্রয়োজন হলে আমরা বুথ বাড়াব। আর বুথের প্রয়োজন হবে কিনা সেটা শনিবার বোঝা যাবে।
তিনি বলেন, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে বিদেশ যাত্রীদের কোভিড পরীক্ষাও করতে হচ্ছে। এটি এই হাসপাতালের জন্য বাড়তি চাপ। সবমিলিয়ে হাসপাতালের সবাই চেষ্টা করছেন। সাময়িক কিছু সমস্যা হলেও নির্ধারিত সময়ে সকলেই টিকা নিয়ে বাসায় ফিরতে পারছেন। সেক্ষেত্রে টিকা গ্রহীতাদের দুয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।