চাঁদপুরে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পেরে বিক্রি করে দেওয়া নিজ সন্তানকে উদ্ধার করলো উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মতলব উত্তরের বারোআনি গ্রাম থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে মা তামান্না বেগমের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী শরীফুল হাসান।
এর আগে, গত জানুয়ারিতে একটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তামান্না ছেলে সন্তান জন্ম দেন। কিন্তু হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারায় ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হন তামান্না।
জানা গেছে, গত ৫ বছর আগে উপজেলার হানিরপাড় গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে আলমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে না নেওয়ায় তারা ছেংগারচর পৌরসভার বারোআনি গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকেন। তামান্না দুই সন্তানের জননী। স্বামীও ঠিকমতো তাদের দেখভাল করে না। তৃতীয় সন্তানের ডেলিভারির সময় স্বামী টাকা জোগাড় করতে না পেরে চলে যান। কয়েকদিন ফোন বন্ধ করে বাসায়ও আসেননি। এরই মধ্যে তামান্না’র প্রসব ব্যথা উঠলে তার মা ও স্বজনরা মিলে ২৩ জানুয়ারি ওই হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ওইদিনই হাসপাতালে সিজার অপারেশনে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে বিল পরিশোধ করতে না পারায় নিজ সন্তানকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। হাসপাতালে স্ত্রীর বিষয়ে খোঁজখবর না রাখলেও পরে স্বামী আলম এসে তার সন্তানকে ফিরে পেতে স্ত্রীকে চাপ প্রয়োগ করেন।
তামান্না বেগম বলেন, অপারেশনের পরপরই টাকা চাওয়া শুরু হয়। আমি গরিব মানুষ, টাকা দেব কোথায় থেকে। সব মিলিয়ে বিল ১৬ হাজার টাকা। ওষুধপত্রসহ আনুষঙ্গিক খরচ নিয়ে ৪০ হাজার টাকা। যখন বিল পরিশোধ ও নিজের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারছিলাম না, তখনই সন্তান বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেই। যদিও এর আগে কাউসার নামে একজন সন্তান বিক্রি করবো কিনা আমার কাছে জানতে চায়।
পরে হাসপাতালের একজনের সাথে কথা বলে ৫০ হাজার টাকায় শিশুটিকে বিক্রি করে দেই। কিন্তু এখন আমার স্বামী আমাকে তার সন্তান দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তা না হলে আমার সাথে সংসার করবে না। তারা আমার কাছ থেকে স্ট্যাম্প করে নিয়েছে, এই সন্তান আমি আর কোনোদিন দাবি করবো না।
হাসপাতালের মালিক প্রতিনিধি লিমন সরকার বলেন, বাচ্চা বিক্রির বিষয়ে আমরা অবগত নই। দু’দিন আগে যখন তিনি অপারেশনের সেলাই কাটতে আসে, তখনও আমরা তার বাচ্চা কেমন আছে জিজ্ঞেস করলে, তিনি ভালো আছে বলে জানান।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী শরিফুল হাসান বলেন, শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। টাকার বিষয়টি আমরা ম্যানেজ করবো।