শফিক আহমেদ সাজীব: ২৪ অক্টোবর রাত। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ৮টা পেরিয়ে ছুটছে নয়টার ঘরে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব শুরু হয়েছে ততক্ষণে। ঝড়ের সঙ্গে বইছিল দমকা হাওয়াও। দুর্যোগের সেই সময়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাঁধা মাইক থেকে ভেসে আসে এক তরুণীর কাতর কণ্ঠের আর্তি- আমার বোন মারজানা হক বর্ষা হারিয়ে গেছে। কেউ তার খোঁজ পেলে আমাদের একটু দয়া করে জানান।
হারিয়ে যাওয়া ছোট বোনের খোঁজে মাইকিং করা তরুণীর নাম সালেহা আক্তার রুবি। রুবি তার বোন মারজানার খোঁজ পেয়েছে অবশেষে। তবে সালেহার সেই চঞ্চল বোনটি আর বেঁচে নেই। তাকে বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে নগরের কোতোয়ালী থানার জামালখান সিকদার হোটেলের পেছনের নালায় পাওয়া গেছে বস্তাবন্দি অবস্থায়।
মারজানা হক বর্ষা (৭), চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার টামটা এলাকার আব্দুল হকের মেয়ে। নগরের জামালখান লিচুবাগান সিকদার হোটেলের পাশের বিল্ডিং বসবাস করতেন। সন্ধ্যায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে সালেহা আক্তার রুবি বলেন, সাত বছরের শিশুর কি শত্রু থাকবে? এলাকায় সবাই বর্ষাকে পছন্দ করতো। সোমবার বিকেলে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল দোকানে যাওয়া জন্য।
পরে বাসায় না আসায় দোকানে খোঁজ নিলে তাঁরা জানান দোকানে আসেনি। এরপর আত্মীয়-স্বজনসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাতে নগরের কোতোয়ালী থানায় জিডি করতে গেলেও থানায় পরের দিন জিডি নেন।
তিনি বলেন, আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করে মরদেহ নালাতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমার বোন নিঁখোজের পর যদি পুলিশের তৎপর হতো, তাহলে তাকে হত্যা করা যেত না। তাহলে তাকে বাঁচানো যেত। এখন আমাদের কী হবে? যা হওয়ার সেটাই হয়ে গেছে। এখন একটা দাবি আমার বোনের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
মারজান হক বর্ষার মামা আরফাত হোসেন রাজু বলেন, নিখোঁজের পর থেকে বর্ষাকে চারদিকে খোঁজা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে নালার মধ্যে একটি বস্তা দেখতে পায় বর্ষার মামা লিটন। পরে আমাদের খবর দিলে নালার পাশে আমরা এসেছিলাম। পরে লিটন ভাইয়ের ছেলে নাঈম ও আমি বস্তাটির কাছে যাই, সেখানে বর্ষার মুখ ও মাথা দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়। নালা থেকে বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে নালার পাড়ে রাখা হয়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে।
এদিকে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) মারজানা হক বর্ষা বাসা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিপস ক্রয়ের জন্য গলির মুখে দোকানে যায়। দোকান থেকে ৩০ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পরও বর্ষা বাসায় ফেরেনি। পরে পরিবারের সদস্যরা আশপাশ এলাকাসহ সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন । খোঁজ না পেয়ে পরদিন বর্ষার বোন সালেহা আক্তার রুবি থানায় নিখোঁজ জিডি করেন। কোতোয়ালী থানার জিডি নম্বর-২০০৩ (২৫/১০/২০২২)। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে বেলাল হোসেন নামে একজন বস্তাবন্দি মরদেহ দেখতে পেয়ে থানায় সংবাদ দেয়।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, ঘটনার রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। পিবিআই ও সিআইডির পৃথক টিম আলামত সংগ্রহ করেছে। আলামত সংগ্রহ শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো কিছু উদ্ধার ও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বর্ষার পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।