English

21 C
Dhaka
শুক্রবার, ডিসেম্বর ২০, ২০২৪
- Advertisement -

চট্টগ্রামে জাঁকজমকে মা বাবার স্নেহ বঞ্চিত তিন কন্যার বিয়ে

- Advertisements -

শফিক আহমেদ সাজীব: একজন ৪৫ দিন, অন্যজন দুই বছর, আরেকজন চার বছর বয়সে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পুলিশ, আদালতের মাধ্যমে পৃথক পৃথকভাবে তাদের আশ্রয় হয় সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা)। সেখানেই ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বাবা-মা ও স্বজন ছাড়াই বেড়ে ওঠেন তারা। সরকারি খরচে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সেখানে থেকেই পড়াশোনা করেন। এরপর মা ও শিশু হাসপাতালে চাকরিও হয়। এবার সরকারি সহযোগিতা ও পৃষ্টপোষকতায় মা বাবার স্নেহ বঞ্চিত তিন কন্যার বিয়েও সম্পন্ন হয়েছে। মা ও শিশু হাসপাতালের দুজন চাকরিজীবী ও বেসরকারি অপর এক প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে তারা পাত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিন কন্যা হলেন মর্জিনা আকতার (২২), মুক্তা আকতার (২০) ও তানিয়া আকতার (২০)। তাদের স্বামীরা হলেন ওমর ফারুক (২৯), মো. নুর উদ্দিন (২৬) ও হেলাল উদ্দিন ২৬)। তারা তিনজনই চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা।

১৩ অক্টোবর ২০২২ বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর অফিসার্স ক্লাবে পারিবারিক আমেজে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। কাবিন ধরা হয় ৭ লাখ টাকা করে।

অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, আলাদা আলাদা প্রাইভেটকারে চেপে একে একে আসেন বর কনে। তাদেরকে বরণ করে নেন জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টরা। এরপর তারা ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় সাজিয়ে রাখা স্টেজে গিয়ে উঠেন। সেখানে তাদের সাথে জেলা প্রশাসকসহ অতিথিরা ছবি তোলেন। কেউ কেউ হাতে তুলে দেন নানা উপহার সামগ্রী। তিন জোড়া পাত্র পাত্রীদের মুখে হাসি লেগেই আছে। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে তারা আনন্দিত। বিয়েতে তাদের শিক্ষিকারাও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, তিন কন্যা তাদেরই সন্তান। তাদের ছোট থেকে বড় হতে দেখেছেন। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন আয়োজিত এ বিয়েতে বর পক্ষেরসহ উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১ হাজারের মতো অতিথি। আপ্যায়ন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত ১০ টায় তিন কন্যাকে তিন পাত্রের হাতে তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান।

তিনি নিরাপদ নিউজকে বলেন, এমন আয়োজনের সাথে থাকতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। তাদের হাসি মাখা মুখ দেখে সত্যিই আমি আনন্দিত। তাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল। সবাই তাদের জন্য দোয়া রাখবেন। আশা করছি, সংসার জীবনে তারা সুখী হবেন। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীও তাদের বিয়ের বিষয়ে অবগত আছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের জন্য উপহার পাঠিয়েছেন। তাদের জন্য দোয়া করেছেন।

অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাউজানের এমপি ফজলে করিম চৌধুরী, বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও রাউজানের উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় ও চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ।

এর আগে বুধবার রাতে রোৗফাবাদে অবস্থিত সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা) তিন কন্যার বিয়ে উপলক্ষে উৎসবমুখর গায়ে হলুদেরও আয়োজন করা হয়। সেখানেও অন্যান্য বিয়ের মতো গান বাজনা থেকে শুরু করে আপ্যায়নের ব্যবস্থাও করা হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, অভিভাবকহীন এ তিন কন্যার বিয়েতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দাওয়াত দেওয়া হয়। তিনি তিন কন্যার জন্য দোয়া করেছেন এবং বিবাহ-পরবর্তী জীবন স্বাচ্ছন্দে নির্বাহ করার জন্য উপহার হিসেবে স্বর্ণালংকার প্রেরণ করেছেন। মহতি এ উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য তিনি জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান এবং সমাজের সবাইকে সামর্থ্য অনুযায়ী এ ধরনের কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসন সূত্র আরো জানায়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তিন কন্যার প্রত্যেককে দুই ভরি করে মোট ছয় ভরি স্বর্ণালংকার এবং দুই লাখ টাকা করে মোট ছয় লাখ টাকার ফিঙড ডিপোজিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক যুগলকে ১টি করে ফ্রিজ ও টিভিসহ দৈনন্দিন ব্যবহারের সকল প্রয়োজনীয় আসবাব ও সারঞ্জাম যেমন- খাট, আলমিরা, ড্রেসিংটেবিল, ফ্যান ও রন্ধনসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। তিন যুগলের এই বিবাহ অনুষ্ঠান স্মরণীয় করে রাখার জন্য তাদের আরও উপহার দেয়া হয়েছে। উপহারের মধ্যে রয়েছে- বিয়ে ও হলুদের শাড়ি, স্যুট, ঘড়ি, পাঞ্জাবি, জুতাসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় সামগ্রী।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীনেই রৌফাবাদের সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) পরিচাললিত হয়। কার্যালয়টি জানায়, বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্থ সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সরকারি শিশু পরিবার সমাজের পরিত্যক্ত ও অভিভাবকহীন শিশুদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। পরবর্তীতে এ শিশুদের পিতামাতার পরিচয় পাওয়া গেলে তাদের যথাযথ অভিভাবক বরাবর ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে যারা অভিভাবকহীন থেকে যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তর তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পাশাপাশি ভরণ-পোষণ ও পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তোলার ভার নেয়। এমনই তিন শিশু মর্জিনা আকতার, মুক্তা আকতার ও তানিয়া আকতার। সরকারি শিশু পরিবারের তত্ত্বাবধানে তারা বেড়ে উঠে উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করেন। তিনজনই বর্তমানে অ্যাটেনডেন্ট পদে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে চাকরি করছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে মাত্র ৪৫ দিন বয়সে কোতোয়ালী থানার একজন উপ-পরিদর্শকের সাহায্যে সমাজসেবা কার্যালয়ে আসা মর্জিনা আকতার জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের অফিস সহায়ক পদে কর্মরত মোহাম্মদ ওমর ফারুককে। চার বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া এবং তারপর আদালতের আদেশে ছোটমণি নিবাসে আশ্রয় পাওয়া মুক্তা আকতার গাঁটছড়া বাঁধেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ নুর উদ্দিনের সাথে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মায়ের মৃত্যুর পর দুই বছর বয়সী তানিয়া আকতারকে ২০০৩ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরে হস্থান্তর করা হয়। তাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেছেন পেশায় বিক্রয়কর্মী হেলাল উদ্দিন।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন