চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় অজ্ঞাত যুবক। গত রবিবার গভীর রাতে নাম পরিচয়হীন এ যুবককে চিকিৎসার জন্য আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। এরমধ্যে পরদিন সোমবার দুপুর দুইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় এ যুবকের। কিন্তু পরিচয় না মেলায় বিপাকে পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে।
শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাত হিসেবেই ঠাঁই হয় হাসপাতালের মর্গে। স্বস্তির খবর হচ্ছে, মর্গে ঠাঁই হওয়ার প্রায় চার ঘণ্টা পর পরিচয় মিলেছে যুবকটির। শুধুমাত্র একটি মেশিনেই মৃতদেহের আঙ্গুলের ছাপ নিতেই ডিসপ্লেতে ভেসে আসে নাম পরিচয়সহ তার ঠিকানাও। আর এ কাজটিই করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা। বায়োমেট্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে শনাক্ত হয় তার পরিচয়। এ কাজে সহযোগিতা করেন দীর্ঘদিন ধরে অজ্ঞাত রোগীদের নিয়ে কাজ করা মানবসেবী সাইফুল ইসলাম নেসার। আর বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করার ঘটনা এটাই প্রথম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই যুবক কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার ভাষানিয়া ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের বড় বাড়ির জমির হোসেনের ছেলে কবির হোসেন। পিতার কর্মস্থলে বেড়াতে গত রবিবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ভাটিয়ারিতে গাড়ি থেকে নামলেও সড়ক পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সে। পরিচয় শনাক্তের পর কবির হোসেনের পরিবারকে খবর দেয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বায়োমেট্রিক না পেলে লোকটির পরিচয় পাওয়া কঠিন ছিলো। যার কারণে যুবকটির মরদেহ পড়ে থাকতো মর্গেই। বেওয়ারিশ হিসেবেই হয়তো দাফন হতো তার। তাই এমন উদ্যোগকে ‘মডেল’ হিসেবে নিয়ে দেশের সব হাসপাতালে অজ্ঞাত পরিচয় রোগী বা নিহতদের পরিচয় শনাক্তে এমন বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করা জরুরি বলে মত স্বেচ্ছাসেবীসহ সকলের।
অজ্ঞাত রোগীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সাইফুল ইসলাম নেসার বলেন, মারা যাবার পর ওই ব্যক্তির মরদেহ নিয়ে বিপাকে পড়ে কর্তৃপক্ষ। পরে পিবিআইকে অনুরোধ করলে তারা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে লোকটির পরিচয় শনাক্তে এগিয়ে আসেন। এরপর সোমবার বিকেলে মরদেহের ফিঙ্গার নিয়ে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। যদি এমন পদ্ধতি সব হাসপাতালে চালু করা যায়, তাহলে স্বজনহীনরা তাদের পরিবারকে খুঁজে পাবে সহজেই।
পরিচয় শনাক্তের সময় থাকা পিবিআইয়ের সদস্য এসআই আফসার উদ্দিন বলেন, নেসারের মাধ্যমে সংবাদ পাওয়ার পর আমরা সোমবার সন্ধ্যায় সাড়ে পাঁচটার দিকে হাসপাতালের মর্গে যাই। সেখানে বায়োমেট্রিক মেশিন দ্বারা ওই অজ্ঞাত যুবকের আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই তার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সকল ঠিকানা চলে আসে। পরে পরিবারকে খবর দিলে তারা এসে মরদেহটি নিয়ে যায়। এ কাজটি অবশ্যই অজ্ঞাত রোগীদের জন্য যুগোপযোগী।
তথ্য বলছে, প্রায় প্রতিদিনই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন স্বজন পরিচয়হীন কোন না কোন রোগী। যা বছরে কমপক্ষে আড়াইশ’র কোটায় দাঁড়ায় অজ্ঞাত এসব রোগীর সংখ্যা। তারমধ্যে চিকিৎসাধীন ও অজ্ঞাত অবস্থায় ১০ শতাংশ রোগী মৃত্যুবরণ করলেও ভর্তিরতদের মধ্যে সুস্থ হয়ে স্বজনদের কাছে ফিরে যেতে পারেন মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ রোগী। কিন্তু অসুস্থ এসব রোগীর সবচেয়ে বড় অংশই তাদের নাম পরিচয় বলতে না পারায় পৌঁছাতে পারেন না নিজ পরিবারের কাছে। যা নিয়ে তৈরি হয় এক বিড়ম্বনাময় পরিস্থিতির।
তবে এমন বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে খুব সহজেই অজ্ঞাত রোগীর নাম পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হলে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ স্বজন পরিচয়হীন রোগীই তাদের পরিবারকে খুঁজে পেতে সক্ষম হবে বলে অভিমত এমন পদ্ধতির উদ্যোক্তা স্বেচ্ছাসেবক নেসারের। শুধু অজ্ঞাত রোগীই নয়, নাম পরিচয়হীন লাশের পরিচয় পেতেও কার্যকরী ভূমিকা রাখবে এ পদ্ধতি এমন আশা মানবিক এ যুবকের।