কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মান্দ্রা হযরত বড় পীর (রহ.) ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ আলী আশরাফুজ্জামান মজুমদার ওরফে আশরাফ (১৪)। মাদরাসার এক শিক্ষকের নির্মম নির্যাতনে তার জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। শ্রেণিকক্ষে শিস বাজানোর অজুহাতে তাকে বেধড়ক মারধর করেছেন মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মো. আবদুস সাত্তার ওরফে মিলন। অথচ এরই মধ্যে ছাত্রের পরিবার নিশ্চিত হয়েছে যেই ‘অপরাধে’ তাকে মারধর করা হয়েছে আশরাফ সে ঘটনায় জড়িত ছিল না। বিনা অপরাধে শিক্ষকের প্রহারে প্রায় এক মাস ধরে হাসপাতাল আর বাড়ির বিছানায় দিন কাটছে তার।
এদিকে, এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কাছে রবিবার (৭ নভেম্বর) লিখিত অভিযোগ করেছেন ছাত্রের পিতা পল্লী চিকিৎসক জহিরুল আলম মজুমদার। তিনি উপজেলার গোহারুয়া মানিকমুড়া গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে অর্থের অভাবে তার চিকিৎসাও করাতে পারছেন না জহিরুল। গত বছরের ১০ নভেম্বর অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগে ওই মাদরাসার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তিনি। জহিরুলের দাবি, ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ‘সুপরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে মেরে ফেলার চেষ্টা’ করা হয়েছে।
আশরাফের বাবার অভিযোগ, গত ১৩ অক্টোবর শ্রেণিকক্ষে শিস বাজায় আরাফাত নামের এক ছাত্র। কিন্তু বিনা অপরাধে ওই শিক্ষক আমার ছেলেকে মারপিট করেন । এতে আমার সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনার পর আমি তিনদিন তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই, কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হলে ১৭ অক্টোবর তাকে কুমিল্লায় নিয়ে ডাক্তার দেখাই। তখন ডাক্তার সাতদিনের জন্য ভর্তির কথা বলেন। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে ছেলেকে ভর্তি করাতে পারিনি। গত ২৬ অক্টোবর সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করি। এর মধ্যে বুকে-পিঠে তীব্র ব্যাথা ও যন্ত্রণা শুরু হলে তাকে কুমিল্লা এনে আবারও ডাক্তার দেখাই। কিন্তু অর্থের অভাবে তাকে ভর্তি করতে পারিনি।
জহিরুল আলম আরো বলেন, স্বল্প আয়ে আমার চার সন্তানকে লেখাপড়া করাতে আমাকে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ছেলের চিকিৎসায় ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু এখনো আমার ছেলে চলাফেরা করতে পারছে না। আমি এখন ছেলের জীবন নিয়ে শংকিত। এ ঘটনায় তিনি ওই শিক্ষকের বিচার দাবি করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আবদুস সাত্তার ওরফে মিলন বলেন, ক্লাসে শিস বাজানোর কারণে আমি দুটি থাপ্পড় দিয়েছি। এর বেশি কিছু না। মূলত ছাত্রের অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগ রয়েছে। এসব কারণেও সে অসুস্থ হতে পারে।
মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মো. নেছার উদ্দিন বলেন, ছাত্রের বাবা অভিযোগ করেছেন প্রায় এক বছর আগে। সেটা মিটমাট হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রকে মারধর করা হয়েছে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা আশরাফের খোঁজখবর রাখছি। বিষয়টি নিয়ে আমরাও আলোচনা করছি। প্রয়োজনে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কাছে রবিবার দেওয়া লিখিত অভিযোগটির তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। সোমবার দুপুরে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউএনও লামইয়া সাইফুল বলেন, অভিযোগটি হাতে পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্তের জন্য একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন