English

23 C
Dhaka
রবিবার, নভেম্বর ১৭, ২০২৪
- Advertisement -

অদম্য মেধাবী টুম্পা এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

- Advertisements -

শফিক আহমেদ সাজীব: অদম্য মেধাবী নাসরিন জাহান টুম্পা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিশেবে নিয়োগ পেয়েছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেক বিভাগের কৃতি শিক্ষার্থী তাঁর স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ৪.০ সিজিপিএ এর মধ্যে ৪.০ সিজিপিএ অর্জন করে চমকপ্রদ ফলাফল অর্জন করেছে।
যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক ইতিহাসে একটি বিরল ও অভূতপূর্ব রেকর্ড। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর টুম্পা তাঁর অনন্য সাধারণ কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রভাষক পদে চূড়ান্ত নিয়োগ পেয়েছে।

এই সাফল্যের নেপথ্য কারণ হিশেবে টূম্পার সরল সাধারণ স্বীকারোক্তি, অধ্যবসায়,আত্মবিশ্বাস ও ধ্রুব লক্ষ্যই তার সাফল্যের মূলমন্ত্র। পাশাপাশি শিক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতা,পরিবারের অকুন্ঠ সমর্থন ও প্রেরণাকে টুম্পা অনুঘটক বলে মনে করেন।

নাসরিন জাহান টুম্পা, ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের কলেজ গেইট এলাকার মরহুম আব্দুস শুক্কুরের কনিষ্ঠা কন্যা। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে টুম্প সবার ছোট।

প্রয়াত বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে। বাবার সেই অমীয় প্রেরণায় বাবার স্বপ্নপূরণ করে মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিধিবাম। বাবা গত হয়েছে আগে, মেয়ের সেই সাফল্য দেখে যেতে পারেননি। তাই বলে থেমে থাকেনি টুম্পা। এগিয়ে গেছে স্বপ্ন ছোঁয়ার অটল পণে।

টুম্পা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিটি স্তরে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ঈদগাহ আদর্শ শিক্ষা নিকেতন থেকে গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে ২০১০ সালে বিজ্ঞানে এসএসসি পাশ করে। ২০১২ সালে গ্লোন্ডেন প্লাস’সহ উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে কক্সবাজার সরকারী কলেজ থেকে।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ভর্তি হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে।

বিরল ফলাফল অর্জনের পরেও কোন সুখবর না পাওয়াতে অনেকে বিদ্রুপ, শ্লেষ ও তীর্যক চাহনীতে ভ্রু কুঁচকালেও তার দৃঢ় আত্মাবিশ্বাসের কখনো আস্থা হারান। সেই অপ্রতিরোধ্য বিশ্বাসের মূল্যায়ন ও মর্যাদা তাকে তার অটল লক্ষ্য পৌঁছে দিয়েছে স্বপ্নবন্দরে। সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারেরই জন্ম তার, শৈশব কৈশোরও কেটেছে ওই পরিবারের মধ্যবিত্ত ঘরানার সংস্কৃতি ও মূল্যবোধে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে তার প্রয়াত পিতা আবদুস শুক্কুর অন্য পাঁচ ছেলেমেয়েদেরকে টুম্পার মত সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়তই ভেঙেছেন মধ্যবিত্তের শেকল। স্বাদ আর সাধ্যের মাঝে একেঁছেন যতিচিহ্ন। মুজিব আদর্শবাদী চেতনা আর সাহস টুম্পার পিতাকেও যে কঠিন তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞার সনাতনী বাঙালি চরিত্রের ক্রুর দৃষ্টি বিক্ষত করেনি তা নয়। মহাসমুদ্রের সাথে যার গাটছড়া বাঁধা শিশিরে তাদের ভয় কিসে। সেই ব্রতই পালন করেছেন আমৃত্যু।

ছোটবেলা থেকে অনন্যসাধারণ মেধাবী টুম্পা পিতার অতন্দ্র স্নেহ মমতা আর ভালবাসাকেই পড়ালেখা, অধ্যবসায় আর সাফল্যের দৈবিক প্রেরণা বানিয়ে পাড়ি দিয়েছে বন্ধুর এই পথ। কাঁটা ছিল, কাঁটা আছে তবুও অমসৃণ সে পথে হেটেঁছে অবলীলায়।

ধরা দিয়েছে অধরা সেই সাফল্য, পেয়েছে একজন অদম্য মেধাবী ও কৃতি শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ পুরস্কার। পাড়াগাঁ থেকে উঠা আসা টুম্পা মধ্যবিত্তের নিগড়ে হাপিত্যেশ আর স্বপ্নবাজীর মল্লযুদ্ধে এক বিজয়ী বীরাঙ্গনা। সমস্ত প্রতিকূলতা একাই লড়েছেন অসম এই সমরভূমে। মেধা,অধ্যবসায় আর অবিচল লক্ষ্য আজ টুম্পাকে পৌঁছে দিয়েছে তার স্বপ্নঠিকানায়।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন