বিশ্বমানের বন্দর হওয়া সত্বেও চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিনিয়ত সবুজ অঞ্চল সংকুচিত হচ্ছে। বাসযোগ্য নগরীর প্রধান অনুসঙ্গ উন্মুক্ত পরিসর। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে উন্মুক্ত পরিসর বিলুপ্তির পথে।
চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি সংলগ্ন এলাকায় হাসপাতাল কিংবা অন্য কোন স্থাপনা নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে ১৫ জুলাই ২০২২ পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ইকো ফ্রেন্ডস’র উদ্যোগে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসা, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক পরিষদ, ওব্যাট থিংক ট্যাঙ্ক চট্টগ্রাম, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ফাউন্ডেশন, স্মাইল বাংলাদেশ প্রভৃতি সংগঠনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
ইকো ফ্রেন্ডস’র সভাপতি উত্তম কুমার আচার্য্য’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নোমান উল্লাহ বাহার’র সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন পরিবেশবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য জামশেদুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, গণঅধিকার ফোরাম’র মহাসচিব এম.এ. হাসেম রাজু, ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাশগুপ্ত, ব্যবসায়ী মাহবুব রানা, ইপসা’র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সমাজকর্মী নেছার আহমেদ খান, চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শহীদ ফারুকী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ আজাদ, বাংলাদেশ গীতিকবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক দিলিপ ভারতী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা)’র বিভাগীয় সমন্বয়ক জিয়াউর রহমান কল্লোল, ইপসা’র উপ-পরিচালক নাছিম বানু শ্যামলী, প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী শাহীন, ওব্যাট হেল্পার্স’র কান্ট্রি ম্যানেজার সোহেল আখতার খান, লায়ন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এমজেএফ, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক অভিজিত চক্রবর্তী, সাংবাদিক বিশ্বজিৎ পাল, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক এ্যাডভোকেট মোস্তফা নূর, স্মাইল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম জয়, ছাত্রনেতা আ স ম রাগিব আহসান মুন্না, এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুর রহমান শিহাব, চন্দনাইশ ছাত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিও আব্দুল মন্নান হৃদয়, রোটারেক্ট ক্লাব অফ চিটাগং সেন্ট্রালের সাধারণ সম্পাদক নফিউল হক তোফায়েল, চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক পরিষদের বিপ্লব চক্রবর্তী তুহিন, শিল্পী জুলেখা বেগম জুলি, সংগীত শিল্পী রায়হান সুলতানা নিহা, শাকিল, কবি জান্নাতুল ফেরদৌস সোনিয়া, এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র সদস্য আব্দুর রহমান রবিন, চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন জাফর, বঞ্চিত নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এম.এ. আশরাফ উদ্দিন, মুন্নি আক্তার প্রমুখ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সিআরবি প্রাঙ্গন একটি ঐতিহাসিক সম্পদ। এটি ১৯৩০ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত। এ সিআরবি প্রাঙ্গনে রয়েছে শত শত মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগের নিদর্শন, স্মৃতি ফলক ও কবর। সিডিএ মাস্টার প্ল্যানে এটিকে বিশেষ ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে এটি রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। এর বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ইকো সিস্টেম অক্ষত রাখতে হবে। যেখানে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রকৃতি বাঁচিয়ে রেখে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়, সেখানে আমাদের দেশে গাছ কেটে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। উন্মুক্ত উদ্যানসহ সব ঐতিহাসিক স্থাপনা বা এলাকার উন্নয়নের জন্য নগর পরিকল্পক, স্থপতি, শিল্পী, ইতিহাসবিদ, উদ্যানবিদ, প্রকৌশলী, শিক্ষক, পরিবেশবিদ ও কবি-সাহিত্যিক সব স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করতে হবে। যারা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে উন্নয়ন কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন ও প্রয়োজনীয় মতামত দেবেন। সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল কিংবা পরিবেশ বিধ্বংসী স্থাপনা চাইনা, চট্টগ্রামবাসী প্রাকৃতিক বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিতে চায়।
আগামী ৭ দিনের মধ্যে সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মানের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক, অন্যথায় চট্টগ্রামবাসী এর বিরুদ্ধে দূর্বার গণপ্রতিরোধ করে তুলবে। সিআরবি চট্টগ্রামের প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রভূমি, আরণ্যিক উৎস। সিআরবি কেন্দ্রীক বাণিজ্যিকীকরণ চট্টগ্রাম নগরীর এই বিস্তৃত সবুজ বেষ্টনীকে বিনষ্ট করবে। বাণিজ্যিক হাসপাতাল নয় বরং সিআরবি সংলগ্ন অবৈধ দখলে থাকা এলাকায় পরিকল্পিত সবুজায়ন নিশ্চিত করতে হবে।