নগরীর বলুয়ার দিঘী পাড়ের অভয়মিত্র মহাশ্মশান। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শবদেহ সৎকার করা হয় এই মহাশ্মশানে। কিন্তু প্রতি বর্ষা মৌসুমেই জোয়ারের পানিতে নগরীর অন্যান্য নিম্নাঞ্চলের মত এই মহাশ্মশান কেন্দ্রটিও জলে প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে করে সংশ্লিষ্টদেরকে নানান প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে মৃতদেহ সৎকার করতে হচ্ছে। এই মহাশ্মশানের স্থানটি উঁচুকরণ ও সংস্কারের ব্যাপারে পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে বেশ কয়েকবার আবেদনও করা হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে অন্তিম যাত্রাতেও মৃতদেহের ভাগ্যে জুটছে জলদুর্ভোগ!
বিষয়টি নিয়ে মহাশ্মশান পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহর লাল হাজারী নিরাপদ নিউজকে বলেন, মহাশ্মশান উঁচুকরণ ও সংস্কার নিয়ে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় সাংসদ ও সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয়ের অভাবে প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়েছে। তবে বর্তমান প্রশাসক ও স্থানীয় সাংসদের কাছে প্রকল্পটি নিয়ে আবার আমরা যোগাযোগ করব। প্রকল্পটি যাতে দ্রুত সময়ে অনুমোদন পায় সে ব্যাপারে তাদের কাছে আবেদন জানাবো। তবে চাক্তাই খালটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীন। খালটি সংস্কার বা সুইস গেইট নির্মাণের বিষয়ে আমরা অবগত নই।
এ ব্যাপারে মহাশ্মশান সংশ্লিষ্ট পুরোহিত টুনটুন চক্রবর্তী নিরাপদ নিউজকে বলেন, মহাশ্মশান উঁচুকরণ ও সংস্কারের জন্য প্রতি বছর নানা উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন কিছুই হয় না। মহাশ্মশানের পেছনে বয়ে যাওয়া চাক্তাই খালে সুইস গেইট স্থাপন করলে জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এতে করে জোয়ারের সময় সুইস গেইট বন্ধ করা হলে শ্মশানে মৃতদেহ সৎকারে জল দুর্ভোগ সমস্যা নিরসন হয়ে যেত।
এদিকে, জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর নিম্নাঞ্চল। এতে করে সংশ্লিষ্ট এলাকার শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে পড়েছে। জলপ্লাবনের সংশ্লিষ্ট সড়কে সৃষ্ট হয়েছে তীব্র যানজট। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জোয়ারের পানিতে গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর ২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদ ও ২৭ নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ এলাকার আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, আগ্রাবাদ হোটেল সংলগ্ন সড়ক এলাকা, সরকারি কমার্স কলেজ রোড, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, সিডিএ আবাসিক, শান্তিবাগ, বেপারি পাড়া,পান্না পাড়া, মোল্লা পাড়া,মুহুরী পাড়া, ছোটপুল, হালিশহর আবাসিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে হাঁটু পানি জমে গেছে।
ভুক্তভোগী আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার কর্মজীবী মো. মাঈনুদ্দিন নিরাপদ নিউজকে বলেন, জোয়ারের সময় গত কয়েকদিন ধরে এখানে পানি উঠে যাচ্ছে। আমাদের কাজকর্ম করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুপুর থেকেই পানি উঠে যাচ্ছে অফিস পাড়াতে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সড়কে পানি থাকে। অথচ এই সময়টাই আমাদের কাজের সময়।
বর্ষা মৌসুম ও জোয়ারে নগরীর চান্দগাঁও ওয়ার্ডস্থ আরাকান সড়কের পুরাতন চান্দগাঁও থানা, সাধুর পাড়া, বড় গ্যারেজ এলাকা, মোহরা ওয়ার্ডস্থ কাপ্তাই রাস্তার মাথা,কামাল বাজার এলাকা, পূর্ব বাকলিয়ার বজ্রঘোনা, রাহাত্তারপুর, চকবাজার ডিসি রোড, তুলাতলী, ময়দার মিল এলাকাসহ চাক্তাই, খাতুনগঞ্জের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
এতে করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসাবাড়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছে। বাসা বাড়িতে পানি উঠার কারণে জনসাধারণকে চরম দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার লক্ষাধিক মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। এলাকা সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে অসহনীয় যানজট।
এ ব্যাপারে চান্দগাঁও সাধুর পাড়া এলাকা মুদি দোকানদার খোরশেদ আলম নিরাপদ নিউজকে বলেন, দোকানের ভেতর পানি ঢুকে পড়েছে। যার কারণে দোকান খুলতে পারছি না। দোকানের ভেতর হাঁটু সমান পানি। বৃষ্টির কমলেও জোয়ারের পানি যোগ হওয়ায় জলাবদ্ধতা দূর হচ্ছে না। ছবিগুলো তোলেছেন ফটোসাংবাদিক কমল দাশ।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন