ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ১৫ মাসে প্রায় ৬৫০ কেজি বা সাড়ে ৫৫ হাজার ভরি সোনা জব্দ করা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৩৩৪ কোটি টাকার বেশি। বেশির ভাগ সোনা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আনা হয়েছে। বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তৎপরতায় এসব সোনাসহ কিছু বাহক আটক হলেও হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক বছরের সোনা জব্দের পরিসংখ্যান বলছে, নানা কৌশলে এই চোরাচালান চলছে। তাঁরা মনে করছেন, জব্দ করা সোনার চেয়ে আরো বেশি সোনা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নজর এড়িয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই এই চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না।
ঢাকা কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত এই ১৫ মাসে ৬৪৯.২০৬ কেজি সোনা জব্দ করা হয়। সে হিসাবে ওই সময় ছয় লাখ ৪৯ হাজার ২০৬ গ্রাম সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। ১১.৬৬ গ্রামে এক ভরি ধরে হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৬৭৮ ভরি। আনুমানিক ৬০ হাজার টাকা (কাঁচা সোনার হিসাব) ভরি ধরলে টাকার অঙ্কে দাঁড়ায় ৩৩৪ কোটি ছয় লাখ ৮০ হাজার। ২০২২ সালে অর্ধশতাধিক মামলায় অন্তত ৮০ জনকে আটক করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে ৪৬টি মামলায় ৪৬ জনকে আটক করার তথ্য জানায় কাস্টম।
ঢাকা কাস্টম হাউসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, চোরাচালানের বেশির ভাগ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। এসবের কিছু চালানে কাউকে আটক করা হয়নি। আবার কিছু চালানে যাত্রীর পাশাপাশি এয়ারলাইনসের কর্মী ও জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আর্মড পুলিশ বলেছে, যেসব সোনা বিমানে আসে, অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো বিমানের ভেতর লুকিয়ে রাখা হয়। এসব সোনা বের করে নিয়ে আসার সুযোগ শুধু বিমান বা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচকের নির্দিষ্ট কিছু লোকজন রয়েছে। বাইরের লোকজনের বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর জায়গায় যাওয়ার সুযোগ নেই। অর্থের প্রলোভনে পড়েই কিছু কর্মী এটা করছেন বলে মনে করছেন তাঁরা।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সূত্র বলেছে, দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহজালালে কিছুদিন পরপরই সোনাসহ কাস্টম ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে চোরাচালানকারীরা। যারা ধরা পড়ছে, তারা সবাই বাহক। এদের পেছনে রয়েছে দেশ ও বিদেশে কয়েক ধাপের সিন্ডিকেট। তারা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তবে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো ও সরকারিভাবে শুল্ক দিয়ে সোনা আনার সুযোগ দেওয়ায় আমদানি বেড়েছে এবং চোরাচালান কিছু কমেছে বলে দাবি করছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘সোনা চোরাচালান বন্ধ করতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। আমাদের এখানে গ্রিন চ্যানেল থাকলেও পরিপূর্ণভাবে স্ক্যানিং করি। বিভিন্ন সময় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি করে সোনার চোরাচালান জব্দ করা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরেও নিয়মিত সোনা উদ্ধার করা হচ্ছে। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকা থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি প্রায় প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ সোনা উদ্ধার করছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ৩৩ কেজির বেশি সোনা জব্দ করেছে বিজিবি।
বৈধপথে সোনার আমদানির নিয়ম : বিনা শুল্কে যাত্রীরা ১০০ গ্রাম বা সাড়ে আট ভরি পর্যন্ত স্বর্ণের গয়না আনতে পারেন। এই পরিমাণ পর্যন্ত আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টম তালিকাভুক্ত করে না।
এর অতিরিক্ত যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ বিধিমালা অনুযায়ী, একজন বিদেশফেরত যাত্রী ২৩৪ গ্রাম বা ২০ ভরি সোনার বার শুল্ক-কর পরিশোধ করে আনতে পারেন। প্রতি ভরিতে শুল্ক-কর দিতে হয় দুই হাজার টাকা। সাধারণত দুটি বারের ওজন প্রায় ২৩৪ গ্রাম।