অপহরণের পর এক স্কুলছাত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগে তিন তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে রাজশাহীর মতিহার থানা পুলিশ।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে অভিযুক্তদের আদালতে সোপর্দ করা হলে তিন তরুণের মধ্যে দুইজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এদিকে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করার কথা আছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার বুধপাড়া মহল্লার মতিউর রহমানের ছেলে আবু হুরায়রা রোহান (১৯), মনিরুল ইসলাম কেনেডির ছেলে মনোয়ার হোসেন মুন্না (২৭) ও আসাদুল ইসলামের ছেলে জুনায়েদ ইসলাম জুনায়েদ (২০)। এর মধ্যে রোহান ও জুনায়েদ ধর্ষণের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) জামিরুল ইসলাম জানান, গত ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে মহানগরীর চন্দ্রিমা থানা এলাকার এক তরুণী রিকশায় করে বিনোদপুরে তার খালার বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে বিশ্ববিদ্যালয় বধ্যভূমির কাছে রোহান ওই তরুণীর রিকশার গতিরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অপহরণ করেন।
পরে ওই তরুণীকে পার্শ্ববতী মটমটির বিলে নিয়ে যাওয়া হয়। রোহান সেখানে তরুণীকে একদফা ধর্ষণ করেন। পরে তরুণীকে আটকে রেখে তার দুই বন্ধু মুন্না ও জুনায়েদকে ফোন করে ডেকে নেন। এরপর তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মতিহার থানার বুধপাড়ার আরবি ফুড গ্যালারি নামের একটি বাগানঘেরা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রোহান, মুন্না ও জুনায়েদ মিলে তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এরপর তরুণীর মোবাইল কেড়ে নিয়ে সেখানে আটকে রেখে আবারও তিন তরুণ রাতভর তাকে ধর্ষণ করেন।
তিনি আরও জানান, ঘটনার রাতে মোবাইল বন্ধ পেয়ে তরুণীর পরিবার বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। ওই রাতেই তরুণীর মা চন্দ্রিমা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন ১৩ জানুয়ারি দুপুর ২টার দিকে তরুণীকে ছেড়ে দেওয়া হলে তিনি পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন।
পরিবারের লোকজন মহানগরীর মতিহারের বুধপাড়ার আরবি ফুড গ্যালারির সামনে থেকে তরুণীকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় তরুণীর মা ওই রাতেই মতিহার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
এদিকে দলবেঁধে ধর্ষণের মামলা রেকর্ডের পর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মধুসূদন রায়ের নেতৃত্বে ধর্ষকদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে মতিহার থানার পুলিশ। রোববার (১৪ জানুয়ারি) রাতে মহানগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে পাঠানো হলে তিন ধর্ষকের মধ্যে রোহান ও জুনায়েদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
রাজশাহীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক পারভেজ জানান, তরুণীকে অপহরণের পর তিন বন্ধু মিলে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ওসি আরও বলেন, থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান মামলাটি তদন্ত করছেন। দ্রুত সময়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে। এছাড়া ভিকটিম সুস্থ হয়ে উঠলে তার জবানবন্দি অনুযায়ী এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা এবং জড়িত থাকলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।