সিলেটি নাটকপাড়ার মৌ। এক নামেই তার পরিচিতি। মডেল মৌ নামে পরিচিত। স্ক্যান্ডালে ভরপুর বেসামাল এক তরুণী। মাদক, অনৈতিক কর্মকাণ্ড- অনেক কিছুতেই জড়িয়ে আছে তার নাম। বাড়ি সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমায়। এরপরও বয়ফ্রেন্ডদের ‘জামাই’ সাজিয়ে বসবাস করেন নগরীর ভাড়া বাসায়। আমোদ-ফূর্তি, পুরুষ সঙ্গ, নেশায় বুঁদ থাকা সবই যেনো মডেল মৌয়ের কাছে নস্যি।
সিলেটের আলোচিত সেই মডেল মৌ এবার মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশের ভাষায়- ‘ডিয়ারিং তরুণী’। গ্রেপ্তার করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। জেরার মুখে স্বীকার করেছে মাদক জগতের অনেক অজানা কথা। মৌয়ের পুরো নাম সামিনা ইসলাম মৌ। বাড়ি দক্ষিণ সুরমার স্বর্ণশিখা আবাসিক এলাকায়। বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে কয়েক বছর আগেও একাধিকবার মৌ খবরের শিরোনাম হয়েছিল।
এবার মাদকে জড়িয়ে ফের এসেছেন আলোচনায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেটের ‘মাদকরাজ্য’ বলে পরিচিত সালুটিকর এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। সঙ্গে তার পুরুষ সঙ্গী সোহেল আহমদও। তার বাড়ি শহরতলীর নাজিরের গাঁওয়ে। পুলিশ জানায়, কোম্পানীগঞ্জের খাগাইল এলাকার মাদকস্পটে অনেকদিন ধরেই যাতায়াত করেন মডেল মৌ। একেক সময় একেক পুরুষ সঙ্গীকে নিয়ে প্রাইভেট কারযোগে খাগাইলে যান মৌ। সেখানে মাদক সেবনের পর বহন করে নিয়েও আসেন। সিলেট নগরে এনে মৌ এসব মাদক বিক্রি করেন। এমন খবর কয়েকদিন ধরে সালুটিকর পুলিশের কানে আসছিল। এরপর পুলিশ এ অভিযোগের নজরদারি শুরু করে। আর তদন্তের ফাঁকেই গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সালুটিকর ব্রিজের নিকটবর্তী বহরঘাটা নামক স্থানে চেকপোস্ট বসায়।
চেকপোস্টে তল্লাশিকালে পুলিশ এক তরুণীকে প্রাইভেট কারের সামনের সিটে বসতে দেখে। কাছে গিয়ে কথা বলতেই রেগে যায় মৌ। নিজেকে মডেল দাবি করে। পুলিশ এ সময় মৌয়ের অসংলগ্ন কথাবার্তায় ধারণা করে মৌয়ের কাছে মাদক রয়েছে। তল্লাশি করে প্রাইভেট কার। এ সময় মৌ ও তার বয়ফ্রেন্ড সোহেলের কাছে দুই বোতল ফেনসিডিল পায়। পরে তাদের পার্শ্ববর্তী সালুটিকর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে মৌ রেগে ওঠেন। তিনি যাবেন না বলে জানিয়ে দেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। সালুটিকর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম খান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ফাঁড়িতে এনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় ফাঁড়ির ভেতরেই নানা আচরণ করেন মৌ।
মাদক বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা সে অস্বীকার করে। তবে- জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে মাদক সেবনের কথা স্বীকার করেছে। সে নিয়মিত ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন করে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে। তার সঙ্গে থাকা বয়ফ্রেন্ডও মাদক সেবনের কথা স্বীকার করে। রাতে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। গতকাল দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে- রাতে থানায় জিজ্ঞাসাবাদকালে মৌ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। সে পায়ের উপর পা তুলে কথা বলে। জেরার মুখে সে উল্টো পুলিশকেও শাসিয়েছে।
নানা কথা ও হুমকি দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। এ সময় সে নিজেও মাদকাসক্ত ছিল বলে জানায় পুলিশ। সিলেটের মডেল সামিনা ইসলাম মৌ’র বয়স ২৬-২৭ বছর হবে। প্রায় ৮ বছর আগে সে সিলেটের মডেলিং শুরু করে। স্থানীয়ভাবে তৈরি করা বিভিন্ন মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় শুরু করে। আর এই অভিনয়ের মধ্যদিয়ে খুব অল্প দিনেই মৌ পরিচিতি লাভ করে। বিশেষ করে সিলেটি নাটকপাড়ার সে নজর কাড়ে।
২০১৩ সাল থেকে অভিনয় শুরু করে সিলেটি নাটকে। এ পর্যন্ত ১৫-২০টি সিলেটি নাটকে সে অভিনয় করেছে। আর এসব অভিনয় তাকে পরিচিতি এনে দিয়েছে কয়েকগুণ। এছাড়া বিভিন্ন স্টেজ শোতে নাচ, থার্টিফার্স্ট নাইটে উন্মাতাল নাচসহ নানা অনুষ্ঠানে মৌয়ের কদর বেশি। অনেকেই বেশি টাকা দিয়ে মৌকে পার্টিতে নিয়ে যান। আর এসব পার্টিতে মাদক খেয়ে নানা সময় উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে মৌ এসেছে আলোচনায়। গত থার্টিফার্স্ট নাইটেও মৌ একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে এ রকম আচরণ করেছে। ধোপাদীঘিরপাড়ের অলিভ ট্রি নামের একটি শিসাঘরে গিয়ে আলোচিত হয়েছিল মৌ। ওই শিসা ঘরের নিয়মিত কাস্টমার ছিল মৌ। বিকাল হলেই শিসার নেশায় আসক্ত মৌ মডেলিং ও সিলেটি নাটক জগতের তার বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে ভিড় জমাতো। এ নিয়ে ওই শিসাঘর আলোচিত হলে পরে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
মৌ’র ঘনিষ্টজনেরা জানিয়েছেন, উচ্ছৃঙ্খল জীবনের মৌ কখনো সাংসারিক হতে পারেনি। নাটকপাড়ার যুবক কামরুল ইসলামের সঙ্গে প্রথম বিয়ে হয়েছিল মৌ’র। সেটি ২০১৪ সালের পূর্বে। তাদের সংসারে এক সন্তানও রয়েছে। কিন্তু কামরুলের সঙ্গে বিয়ে হলেও ওই বছর নগরীর হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ী সবুজ ও সাজুর সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েছিল মৌ।
একসঙ্গে তিনি স্বামী কামরুলের ঘরে থেকেই দুই যুবকের সঙ্গে প্রেম চালিয়ে যান। এ নিয়ে ত্রিভুজ প্রেমের ঘটনাটি পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। জেলেও গিয়েছিল মৌ। তবে- মৌয়ের এসব উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ধরা পড়ার পর কামরুল তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন। এ ঘটনার পর নগরীর চারাদীঘিরপাড় থেকে মাদকদ্রব্যসহ আরও একবার গ্রেপ্তার হন মৌ।