রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে কর্মচারীদের হামলায় রোগীর স্বজনকে রক্তাক্ত আহত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এসে সহকারী পরিচালক মফিজুর রহমান মোল্ল্যাও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, অনিয়মের প্রতিবাদ করায় সোমবার দুপুরে হাসপাতালের তিন আউট সোর্সিং কর্মচারীর হামলায় মাসুম পারভেজ (৩৯) নামে এক রোগীর স্বজন আহত হয়েছেন।
সোমবার দুপুরে হাসপাতালটির বহির্বিভাগের কাউন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তিনি কেরানীগঞ্জের বন্দডাকপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
এ সময় ঘটনাস্থলে এসে সহকারী পরিচালক মফিজুর রহমান মোল্ল্যা আহতকে উদ্ধার না করে উল্টো রোগীদের শাসিয়ে বলেন, ‘সব রোগীদের লাথি মেরে বের কর। আর কাউন্টার বন্ধ কর।’ পরে ভুক্তভোগী নিজেই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দিলে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল এসে তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।
তবে মফিজুর রহমান মোল্লা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনাস্থলে আমি দালালদের শাসিয়েছি। রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
আহত পারভেজ বলেন, সোমবার সকালে রিকশা থেকে পড়ে স্ত্রী শারমিন আক্তারের হাত ভেঙে যায়। তাকে চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসক কয়েকটি পরীক্ষা দেয়। তার স্ত্রী ভাঙ্গা হাত নিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কাউন্টারে টাকা জমা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও টাকা জমা দিতে না পারায় তিনি স্বামীকে খবর পাঠান।
কিছুক্ষণ পর তিনি নিজে কাউন্টারের সামনে গেলে দেখতে পান যে, দালালরা হাসপাতালের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে লাইন ছাড়া টাকা জমা দিচ্ছেন। তখন তিনি কাউন্টারে থাকা কর্মচারী সোহাগকে স্ত্রীর অবস্থা খারাপ জানিয়ে তাদের টাকা জমা নেওয়ার অনুরোধ জানান ও দালালদের মাধ্যমে টাকা জমার বিষয়ে প্রতিবাদ করলে কথা কাটাকাটি হয়। এতে শাহিন, আরিফ, রনিসহ কয়েকজন কর্মচারী মিলে তার ওপর চড়াও হন এবং এলোপাতাড়ি পিটিয়ে নাক ফাটিয়ে দেন। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে বলে জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য কাউন্টারে টাকা জমা দিতে কয়েকশ রোগী ও তার স্বজনদের দীর্ঘ লাইন থাকার পরেও ভেতরে স্টাফ ঢুকে আর টাকা জমা দিয়ে তাদের নিজস্ব লোকের কাজ করিয়ে নেন। এ নিয়ে আমরা সকলে প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু কাউন্টারের ভিতরে ক্যাশিয়ার কোনো কর্ণপাত না করায় আমরা (রোগীরা) চিল্লাচিল্লি করি ক্যাশিয়ার কাউন্টারের ভিতর থাকা টিয়া কালারের শার্ট পরহিত লোকটির সাথে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ করে লাইনে দাঁড়ানো একজনকে হাসপাতালের কার্ড ঝুলানো কতিপয় স্টাফ মারধর করতে থাকে। পরে তার নাক ফেটে গেলে রক্ত ঝরতে থাকে। পুরো ফ্লোর রক্তে একাকার হয়ে যায়।
ঘটনার পরপরই সহকারী পরিচালক এসে কাউন্টার বন্ধ করে রোগী সব লাথি মেরে বের করে দিতে বলেন। একটি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক যদি গুণ্ডা হয়, তাহলে অন্যরা তো বেপরোয়া হবেই বলে মন্তব্য করেন তারা।
দুলাল নামের এক রোগী বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক যদি বলেন যে- কাউন্টার বন্ধ কর, রোগীদের লাথি মেরে বের কর। এটা তো মগের মুল্লুক নাকি।
হাফিজ নামের এক রোগী জানান, সকাল ৭টায় আসেন মিটফোর্ড হাসপাতালে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরে দেখি স্টাফ কার্ডধারী লোকজনের কারণে লাইনের লোক কমছে না। এ নিয়ে কথা বলামাত্র মাথার উপর ঘুসি মারে। আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি।
মিটফোর্ড হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী রশিদ উন-নবী বলেন, ভুক্তভোগী ওই কর্মচারীদের মাফ করে দিয়েছেন। উভয়পক্ষের উত্তেজনা থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়। আমাদের লোকজন বেশি মেরে দিয়েছে। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।