ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে স্বামীর পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় রোকসানা আক্তার সাদিয়া (২২) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে ও গলা টিপে হত্যার অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। আজ শুক্রবার ভোররাতে উপজেলার পাগলা থানার নিগুয়ারী ইউনিয়নের গৈয়ারপাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, পারিবারিকভাবে প্রায় ৬ বছর পূর্বে উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নের মাখল শেখ ভিটা গ্রামের মৃত মোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে রোকসানা আক্তার সাদিয়ার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গৈয়ারপাড় গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা কেরামত আলীর ছেলে রাসেল মিয়ার (৩৩) বিয়ে হয়। এই দম্পত্তির দেড় বছর বয়সের সানিল ও ছয় মাস বয়সের সাওয়াদ নামে দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই স্বামী রাসেল ও তার পরিবারের লোকজন যৌতুকের জন্য সাদিয়াকে শারীরিক, মানসিক নিযাতন করে চাপ দিয়ে নগদ টাকা, আসবাবপত্রসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার যৌতুক আদায় করে রাসেল মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন। আরো চার লাখ টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে রাসেল মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন। চাহিদা মতো যৌতুক না পেয়ে গত ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ১৮ তারিখে সাদিয়াকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে পিতার বাড়ি পাঠিয়ে দেয় রাসেল মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন। পরে সালিশ করে আর মারধর করবে না, যৌতুক দাবী করবে না শর্তে সাদিয়াকে শ্বশুর বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়।
সম্প্রতি আবারো চার লাখ টাকা যৌতুকের জন্য সাদিয়ার উপর চড়াও হয় রাসেলের পরিবারের লোকজন। গত দুই মাস আগে সাদিয়ার পিতা মোফাজ্জল হোসেন মারা যান। এ অবস্থায় সাদিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে আর যৌতুক দিতে অপরাগতা করে। এর মধ্যেও রাসেল নিজ গ্রামের এক তরুণীর সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে রাসেল প্রতিদিনই স্ত্রী সাদিয়াকে শারীরিকভাবে নিযাতন করতো। শুক্রবার ভোর রাতে সাদিয়াকে তার স্বামী রাসেল মিয়া ও পরিবারের লোকজন মারধর করে ও গলা টিপে ধরে। এতে সে মারাত্মক ভাবে আহত হলে সাদিয়ার শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। পরে সাদিয়ার লাশ বাড়িতে রেখে স্বামী ও বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ৯৯৯ নম্বরে খবর দিলে পাগলা থানা পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
নিহতের মা আয়মননেছা (৫০) বলেন, ১০ লাখ টেহা যৌতুক দিছি। আরো চাইর লাখ টেহার লাইগ্যা আমার মায়াডারে জানুয়ারের বাচ্চা রাসেল সব সময় মারতো। আমি বিচার চাই। যৌতুকের লাইগ্যা আর যেন কোনো মার বুক খালি না অয়। আল্লাগো তুমি বিচার করো।
পাগলা থানার ওসি রাশেদুজ্জামান জানায়, সুরতহাল রিপোট অনুযায়ী লাশের গলায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে।