সাতক্ষীরা দেবহাটার চরবালিথা গ্রামের ৭ বছরের শিশু আলিফ হোসেন ফারহানের দু’চোখ খুঁচিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় ছোট মামা আশিকুজ্জামান ও বড় মামী রানী বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক চাঞ্চ্যকর জবানবন্দী প্রদান করেছেন। এসময় তারা জানিয়েছেন, তাদের দুজনের পরকীয়া দেখে ফেলায় শিশুটিকে নির্যাতন করেন তারা।
মঙ্গলবার বিকেলে তারা সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক এ জবানবন্দি প্রদান করেন। এরআগে সোমবার রাতে দুই দফায় তাদের বাড়ি থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত রানী বেগম (২২) দেবহাটা উপজেলার চরবালিথা গ্রামের আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী ও আশিকুর রহমান চরবালিথা গ্রামের হাচিম সরদারের ছেলে।
এদিকে শিশু আলিফ হোসেন ফারহানের অবস্থার অবনতি হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে ভর্তির পর তার দু’ চোখে অস্ত্রপচার করা হয়েছে। তবে, তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার ও তার স্বজনরা।
শিশুটির পিতা মঈনুদ্দিন সরদার জানান, তার প্রথম স্ত্রী শারমিন সুলতানা মারা যাওয়ার পর একমাত্র সন্তান আলিফ তার নানীর কাছে থাকতো। বর্তমানে আলিফ চরবালিথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। মাঝে মধ্যে তার মামী তাকে নির্যাতন করতো বলে তিনি জানতে পেরেছেন। অথচ আলিফ তার মামী রানী বেগমকে মা বলে ডাকতো। সোমবার দুপুর একটার দিকে শিশু আলিফকে রক্তাক্ত অবস্থায় মরিচ্চাপ নদীর বেড়িবাঁধের পাশে একটি পানিবিহীন পুকুরে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আলিফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুই চোখ খুঁচিয়ে, খুঁচিয়ে মারাত্মক ভাবে রক্তাক্ত জখম করে এবং তার চোখের আশে পাশে, মুখমন্ডলে, নাকে, মুখে, ঠোটে রক্তাক্ত জখম করা হয় বলে চিকিৎসক পারভিন আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ঢাকার জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ জানান, সদর থানা পুলিশ ও দেবহাটা থানা পুলিশ যৌথভাবে রানী বেগমকে সোমবার রাত ৯ টার দিকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে দেবর আশিকুরের সঙ্গে রানী বেগমের পরকীয়ার ঘটনা দেখে ফেলায় আলিফকে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে জখম করা হয়। পরে সোমবার রাত ১২টার দিকে মামা আশিককে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিশুটির বাবা মঈনুদ্দিন সরদার বাদী হয়ে মঙ্গলবার রানী বেগম ও আশিকুজ্জামানকে আসামি করে থানায় একটি মামলা (৪নং) দায়ের করেন। বিকেলে রানী ও আশিক জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। জবানবন্দিতে আলিফকে এই নির্যাতনের জন্য একজন অপরজনকে দায়ী করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।