মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা দেওয়ার পরও ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাননি ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের নারী যাত্রী।
বার বার আকুতি জানানোর পরও তাকে ধর্ষণ না করে ছাড়েনি ডাকাত দল। একে একে ছয়জন ডাকাত ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। বর্তমানে ওই নারী টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী জানান, তিনি ঢাকার নারায়ণগঞ্জে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন তিনি। বাসটি রাত সাড়ে ৮টায় যাত্রা শুরু করে। রাত সাড়ে ১১টায় সিরাজগঞ্জে একটি হোটেল যাত্রাবিরতি দেওয়ার পর আবার রওনা দেয় বাসটি। বাসটি গেটলক সার্ভিস থাকলেও রাস্তায় সিগনাল দিয়ে তিন দফায় ১০ জন তরুণ ওঠেন বাসে। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর তিনিসহ বাসে থাকা অন্য যাত্রীদের হাত, পা, মুখ বেঁধে ফেলেন যাত্রীবেশে ওঠা ডাকাত দল। এরপর একে একে সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করতে থাকে। ভুক্তভোগী নারী ছিলেন মাঝখানের দিকের সিটে। এক ডাকাত এসে তার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন। বাসে থাকা শিশুদেরও হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। কাউকে কাউকে মারধরও করা হয়। কিছুক্ষণ পর আরেক ডাকাত এসে ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করতে থাকেন। তিনি বিপদ আঁচ করতে পেরে বার বার ছেড়ে দিতে আকুতি জানান। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। একে একে ছয়জন ডাকাত তাকে ধর্ষণ করেন।
তিনি আরও জানান, তার মতো আর কেউ বাসটিতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না, তিনি বলতে পারবেন না। কারণ, তারসহ সবারই চোখ বাঁধা ছিল।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রেহানা পারভীন জানান, প্রথামিকভাবে ধর্ষণের কিছু আলামত পাওয়া গেছে। তবে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সোয়াব পাঠানো হয়েছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ভুক্তভোগী নারী যাত্রীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাসের এক যাত্রী বাদী হয়ে ডাকাতি ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় বাসচালক রাজা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ডাকাত দলের সদস্য। রাজা প্রাথমিকভাবে পুলিশকে জানিয়েছেন, ডাকাতির সময় তিনি পুরো তিন ঘণ্টা বাস চালিয়েছেন। তিনি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত নন। অন্যরা ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন। গ্রেফতারকৃত রাজাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২ এপ্রিল টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিনিময় পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে এক পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণ করা হয়। ওই ঘটনায় মেয়েটির স্বামী বাদী হয়ে তিনজনের নামে মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাসের চালক ও দুই সহকারীকে গ্রেফতার করে।
২০১৭ সালের গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে এক নারীকে চলন্ত ছোঁয়া পরিবহনের বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। তিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মী ছিলেন।
রায়ে ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর (৪৫), চালকের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। বাসের সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।