সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরে এক সৌদিপ্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পুলিশ শহরের পৌর পয়েন্টের একটি মার্কেটের অভি মেডিক্যাল নামের এক ফার্মেসি থেকে ওই নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহতের নাম শাহনাজ পারভীন জ্যােৎস্না (৩৫)। তিনি উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা গ্রামের সৌদিপ্রবাসী ছরুক মিয়ার স্ত্রী।
নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজ মালিকানাধীন বাসায় সৌদিপ্রবাসীর স্ত্রী তাঁর তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। বাসার নিকটবর্তী ব্যারিস্টার আব্দুল মতিন মার্কেটে অভি মেডিক্যাল ফার্সেমিতে ওষুধ ক্রয় সূত্রে যাতায়াত করতেন। গতকাল বুধবার বিকেলে ফার্মেসিতে যাচ্ছেন বলে বাসা থেকে বের হন শাহনাজ। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ।
এদিকে নিহতের ছোট ভাই তাঁর বোন বাসায় ফেরেননি জানতে পেরে ওই ফার্মেসিতে যান বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে। তখন ফার্মেসি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপকে মোবাইলে কল দিলে তিনি জানান, তাঁর বোন ওষুধ না পেয়ে চলে গেছেন। নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করলে অন্য এক নারী ফোন রিসিভ করে জানান, তিনি (নিহত নারী) সিলেট ওসমানীতে আছেন। সেখানে যোগাযোগ করেও তাঁর সন্ধান মেলেনি।
পরে আরেকবার ফোন দিলে একই নারী ফোন রিসিভ করে জানান, শহরের আর্ট স্কুল এলাকায় আছেন। এ রকম একেক সময় একেক কথা বলে বিভ্রান্ত করতে থাকেন ওই নারী। পরে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়।
সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে শাহনাজের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
রাতভর বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও নিহত শাহনাজের সন্ধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে নির্বাহী হাকিম জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলামের উপস্থিতিতে জগন্নাথপুর থানার পুলিশ তালাবদ্ধ অভি ফার্মেসির তালা ভেঙে দোকানে অভিযান চালায়। এ সময় দোকানের রোগী দেখার টেবিলের নিচে বিছানার চাদর দিয়ে মোড়ানো ওই নারীর শরীর ছয় টুকরা (গলা, পেট, হাত-পা) বিছিন্ন অংশ দেখতে পায় পুলিশ।
ঘটনার পর থেকে ফার্মেসির মালিক জিতেশ গোপ ও তাঁর পরিবার পলাতক। জিতেশ গোপ কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সইলা গ্রামের যাদব গোপের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পৌর শহরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করে আসছিলেন।
হত্যাকাণ্ডটি এর মধ্যেই শহরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কেন হত্যা করা হলো নারীকে? ব্যস্ততম এলাকায় কি করে হত্যা করা হলো। কেউ কেউ ধারণা করছেন, টাকার কারণে এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে।
নিহতের ছোট ভাই হেলাল মিয়া জানান, গতকাল বুধবার তাঁর বোন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। তবে কত টাকা তুলেছেন তিনি তা জানেন না। তাঁর বোনকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এই হত্যার বিচার চান। হেলাল জানান, তাঁর বোন জামাই দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে থাকেন। বোনের পরিবারের সঙ্গে তিনি শহরে বসবাস করেন। নিহত নারীর এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশ ওই ফার্মেসির সিলিং থেকে একটি রক্তমাখা ছোরা উদ্ধার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছোরা দিয়েই শাহনাজকে হত্যা করা হয়েছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।