রাজধানীর একটি ধর্ষক চক্র চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এরা বিভিন্ন শপিং মল ও সুপার শপে সেলসে কাজ করা তরুণীদের টার্গেট করে। জুন মাসে চক্রের তিনজনকে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চক্রটি ব্ল্যাকমেলিংয়ের সঙ্গে জড়িত এবং পর্নোগ্রাফি করে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১১ জুন রাত সাড়ে ১২টায় রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার অলি মিয়ার টেক থেকে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে প্রাণভিক্ষা চান এক তরুণী। তাৎক্ষণিক মিরপুর মডেল থানার এসআই সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে যায়।
সেখানে পুলিশ গিয়ে জানতে পারে, অলি মিয়ার টেকের ৩৬৮/১০ নম্বর বাড়ির একটি বাসা আগে থেকে এক ব্যক্তি ভাড়া নেন। ১ জুন তার কাছ থেকে দুটি রুম সাবলেট ভাড়া নেন শাহিন। তিনি মিরপুরে একটি শপিং মলে চাকরি করেন বলে জানান। এদিকে দুই মাস আগে মিরপুর শপিং সেন্টারের চতুর্থ তলায় শিখা আক্তার নামে এক নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় ভুক্তভোগী ওই তরুণীর। দুজনই সেখানে সেলসম্যানের চাকরি করতেন। পরিচয় থেকে দুজনই বিভিন্ন কফিশপে আড্ডা দিতেন, বেড়াতে যেতেন। এরই মধ্যে ভুক্তভোগী তরুণী ভাড়া নেওয়ার জন্য নতুন বাসা খুঁজছিলেন। যখন শাহিন সাবলেট ভাড়া নেন পরদিনই শিখা ওই তরুণীকে প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘আমি আমার ভাইয়ের সঙ্গে থাকি। চাইলে তুমিও এক রুম ভাড়া নিয়ে থাকতে পার।’ মনের বিশ্বাস থেকে ওই বাসা ভাড়া নিয়ে উঠে পড়েন ওই তরুণী। তবে শাহিন যার কাছ থেকে সাবলেট নিয়েছিলেন তিনি অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি জানতেন না তার বাসায় এক সপ্তাহ ধরে দুজন মেয়ে বসবাস করছেন। এমনকি বাড়িওয়ালাও জানতেন না।
১১ জুন সন্ধ্যায় ওই বাসায় শাকিল নামে শাহিনের এক বন্ধু আসেন। বাসায় আড্ডা জমানোর একপর্যায়ে ওই তরুণীকে পাশের রুমে নিয়ে জোর করে চেয়ারে বসান তারা। এরপর তাকে বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দেন শাহিন। রাজি না হলে তার হাত-পা বেঁধে মারধর করেন শাহিন। শাহিনের কুপ্রস্তাবে ওই তরুণীকে শিখাও রাজি হতে বলেন। মারধরের পর আরেক রুমে নিয়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেন শাহিন। আর পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইলে তা ভিডিও করেন শিখা ও শাকিল। মধ্যরাতে সুযোগ পেয়ে ওই তিনজনকে বাসায় আটকে রেখে পালিয়ে যান মেয়েটি। দরজা ভেঙে চক্রের তিনজনও পালিয়ে যান। এর পরই ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশ ডেকে সব খুলে বলেন মেয়েটি। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে মিরপুর এলাকা থেকে শিখাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৪ জুন মিরপুর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী তরুণী।
এরপর পুলিশ পুরান ঢাকা থেকে শাহিনকে এবং সাভার থেকে শাকিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহিনকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী মেয়েটি জানিয়েছেন, কুপ্রস্তাবে যখন তিনি রাজি হচ্ছিলেন না তখন রান্নাঘর থেকে শাহিন বঁটি এনে তাকে কোপ দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখাচ্ছিলেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, শাহিন আর শিখার মোবাইলে আরও অনেক ভিডিও পাওয়া গেছে। দুজন ভাই-বোনের সম্পর্কের কথা বলেন তারা। মূলত তারা প্রেমিক-প্রেমিকা। এরা নানাভাবে ব্ল্যাকমেলিং করে বেড়ান। এদের শুরু সাভার এলাকা থেকে। তরুণীদের মাধ্যমে মাদক চোরাচালানও করে থাকেন তারা। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা তো একজন ভুক্তভোগীকে পেয়েছি। এদের খপ্পরে পড়ে আরও অনেক তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।’