ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ এবার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘দারাজ’ এর নামে ভুয়া ওয়েবসাইট বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে।
জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম আল ইমরান জুয়েল। তিনিই এই প্রতারণার মূলহোতা। তাকে বনানী থানায় দায়ের করা মামলায় ৭দিনের রিমান্ড আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নোয়াখালী জেলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার হেফাজত হতে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল সেট, একটি ডেস্কটপ, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রনিক কার্ড ও শতাধিক প্রি-একটিভেটেড সিম কার্ড জব্দ করা হয়।
সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার ব্যাপক প্রসার ও করোনাকালীন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনলাইন শপিংয়ের উপর নির্ভরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন এই বাজার ব্যবস্থার সুযোগ নিচ্ছে অনলাইন প্রতারকচক্র। প্রতারণার এই ধারায় সম্প্রতি যোগ হয়েছে অভিনবত্ব। অনলাইন মার্কেটপ্লেস দারাজ-এর অনুকরণে daraz.cl নামক ভুয়া ওয়েবসাইট ও “Daraz Bangladesh” ফেসবুক পেইজ বানিয়ে একটি চক্র বেশ কিছুদিন ধরে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রয়ের নামে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল।
সিটিটিসি সূত্র আরও জানায়, অতি সম্প্রতি বিষয়টি আন্তর্জাতিক ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবার মালিকানাধীন অনলাইন মার্কেটপ্লেস দারাজ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে- বনানী থানায় একটি মামলা রুজু হয়। মামলাটি তদন্ত শুরু করে সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। তদন্তকালে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রটিকে শনাক্তপূর্বক গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতারক চক্রের সদস্যরা https://www.ofaex.com/ থেকে ডোমেইন ও হোল্ডিং ক্রয় করে daraz.com.bd এর অনুকরণে daraz.cl নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। অতঃপর বিভিন্ন পণ্যে ৫০-৭০% পর্যন্ত আকর্ষণীয় ছাড়ে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতো। বিজ্ঞাপন তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতো অন্যান্য ই-কমার্স সাইট থেকে ক্লোন করা ছবি। ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে তারা Daraz Bangladesh নামে একটি ফেসবুক পেইজও তৈরি করেছিল। সাধারণ মানুষ এই ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজকে প্রকৃত Daraz এর মনে করে কেনাকাটা করার জন্য daraz.cl ওয়েবসাইটে দেয়া ‘নগদ’ নাম্বারে টাকা পরিশোধ করতো। ওয়েব সাইটটি কারিগরি দিক বিবেচনায় এতটাই দক্ষতার সাথে তৈরি করা হয়েছিল যে সাধারণ মানুষ সহজেই প্রতারিত হতেন।
নিজেদের আড়াল করার জন্য প্রতারক চক্রটি সাধারণ গ্রাহকদের হেল্পলাইন নম্বর হিসেবে অনলাইন টেলিফোনি সার্ভিস ব্রিলিয়ান্ট এর একটি নম্বর সরবরাহ করতো। এছাড়া বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তারা daraz.cl ওয়েবসাইটে দাপ্তরিক একটি ঠিকানাও প্রদান করেছিল। সুচতুর এই গ্রুপটি অর্থ পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে নকল ওয়েবসাইটে একেক সময় একেক ‘নগদ’ নম্বর প্রদান করে অর্থ আত্মসাৎ করতো।
এভাবে খুব অল্প সময়েই চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে ১০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত জুয়েল একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার এবং সে এই চক্রের মূলহোতা ও ওয়েবসাইটটির ডিজাইনার। ইতোপূর্বেও এই প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট যেমন walton.com, bestzone.com.bd বানিয়ে সাধারণ ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করেছিল বলে সিটিটিসি সূত্র জানায়।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন