ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বউ ও শ্যালিকাকে ভারতে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। কৌশলে পারিবারিক বন্ধন তৈরি করে প্রতারকচক্র তাদেরকে বিক্রি করে দিয়েছে। পরে ভারতে নারী ব্যবসায়ীদের খপ্পর থেকে পালাতে গিয়ে একজনের ঠাঁই হয়েছে সেফহোমে, অন্যজন রয়েছেন দেশটির পুলিশ হেফাজতে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রসুলপুর গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের দুই তরুণী দুই বছর আগে চাকরি নেন শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় রিদিশা ফুড এন্ড বেভারেজ নামে একটি বিস্কুট কোম্পানিতে। সম্পর্কে তারা আপন দুই বোন। চাকরির সুবাদে জৈনা বাজার এলাকায় বাবুল মার্কেটের পেছনে হাবিবুল্লাহর বাড়িতে একটি রুম ভাড়া নিয়ে তারা বসবাস করতেন। এ সময় নারী পাচারকারী দলের সদস্য সুজন (৪৫) ও মো. ইউসুফ (২২) ওই দুইবোনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। সুজন নিজেকে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার এবং ইউসুফ ময়মনসিংহের ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দেন। তারাও জৈনা বাজার এলাকায় ভাড়াবাড়িতে থাকতো।
ধীরে ধীরে ওই দু’বোনের বিশ্বাস অর্জন করে। এক সময় নারী পাচারকারী ইউসুফ বড় বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ছোট বোন ছাড়া পরিবারের কাউকে না জানিয়েই এ বিয়ে হয়।
বিয়ের পর দুই বোন পাচারকারীদের হাতের মুঠোয় চলে যায়। এরপর তাদের জীবনে নেমে আসে দুর্দশা। বিয়ের দু’মাস পর গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে তাদের দু’বোন ভারতে পাচারের শিকার হন। নারী পাচারকারী দলের সদস্য সুজন ও ইউসুফ তাদেরকে টিকটক ভিডিও বানিয়ে ও ভালো চাকরির মাধ্যমে মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা আয়ের লোভ দেখিয়ে চোরাপথে জীবননগর সীমান্ত দিয়ে ভারতে নিয়ে যায়। এরপর তিন লাখ টাকায় ভারতের রানাঘাট এলাকার নারী ব্যবসায়ী বাবলু ও রাহুলের কাছে বিক্রি করে দেয়। শুরু হয় তাদের যন্ত্রণাদগ্ধ কাহিনী। তাদেরকে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা এলাকার বিভিন্ন বাসায় ও হোটেলে রেখে দেহব্যবসা করানো হতো। দুই বোনকে আলাদা আলাদা জায়গায় রাখা হতো। নারী ব্যবসায়ীদের কথা না শুনলেই দেয়া হতো ইলেকট্রিক শক। কঠোর নজরদারিতে এদের রাখা হতো। পশ্চিবঙ্গে করোনার প্রার্দুভাবে ১৬ই মে থেকে লকডাউন শুরু হলে তাদের ওপর নারী পাচারকারীদের নজরদারি শিথিল হয়। এই সুযোগে দুই বোন নারী পাচারকারীদের নরক থেকে পালিয়ে আসে। গত ১৭ই মে ছোট বোন হাওড়া স্টেশন এলাকায় পুলিশের হাতে আটক হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কলকাতার শিয়ালদহ এলাকায় ভারতীয় সরকার পরিচালিত সেফ হোম পার্টিসিপেটরি সিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এর হাতে ন্যস্ত করে। পার্টিসিপেটরি সিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এর নির্বাহী পরিচালক প্রবীর রায় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মেয়েটি এখন ভালো আছেন। বিষয়টি বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে গত ২১শে মে ভারতের বোঝাপড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর হাতে গ্রেপ্তার হন। বিএসএফ তাকে ভারতীয় পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সংবাদটি ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এদিকে গত তিন মাস ধরে দুই তরুণী নিখোঁজ হওয়ার পর তাদের, পিতামাতা পাগলপ্রায়। তাদের পিতা জানান, মাঝে মধ্যেই ভারতীয় নম্বর থেকে কল করতো ওই দলের লোকজন। দুই লাখ টাকা দাবি করতো আমাদের কাছে। বলতো টাকা দিলে মেয়েদের দেশে ফেরত পাঠাবে। অন্যথায় দুবাই বিক্রি করারও হুমকি দিতো। মাঝে মধ্যে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতো। আর হুমকি দিতো বাংলাদেশের কাউকে না জানাতে। জানালে খুন করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেবে বলেও হুমকি দিতো। অনেকদিন যোগাযোগ না থাকায় গত ২৮শে মে শ্রীপুর থানায় এ বিষয়ে জিডি করতে গেলেও তা নেয়নি পুলিশ। শ্রীপুর থানার ওসি খন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই।