মির্জাপুরে টাঙ্গাইল জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা খন্দকার রেদওয়ানা ইসলামকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতাল কেবিনে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গিয়াস উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্বামী দেলোয়ার হোসেন মিজানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠার পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন।
পুলিশ ও কুমুদিনী হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রায় দুই বছর আগে রেদওয়ানা ইসলাম টাঙ্গাইলে বদলি হয়ে আসেন। তার স্বামী টাঙ্গাইলের একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যান। স্বামী-স্ত্রী দুজন জেলা প্রশাসনের কোয়ার্টারে বসবাস করতেন।
সোমবার (২২ মার্চ) সকালে প্রসব ব্যথা নিয়ে রেদওয়ানা ইসলাম কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি হন। ওইদিন সকাল ১০টায় সিজারিয়ান অপারেশনের মধ্যেমে তিনি মেয়ে শিশুর জন্ম দেন। শুক্রবার (২৬ মার্চ) হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে মেয়ে কিছুটা অসুস্থ থাকায় তিনি ছুটি না নিয়ে হাসপাতালের দু’তলার ১১ নম্বর কেবিনে থেকে যান। আর শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের তিন তলায় থাকা ইনকিবিউটরে রাখা হয়। সেখান থেকে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে রেদওয়ানা ইসলাম দেখভালের জন্য সঙ্গে থাকা তার মামি খোদেজা বেগম ও তার শিশু সন্তানের দেখভালের জন্য মর্জিনা বেগম তাদের কাছে থাকতেন। দুপুরে স্বামী আসায় শিশুটিকে মায়ের বুকের দুধ খাইয়ে খোদেজা ও মর্জিনা পুনরায় তিন তলায় নিয়ে যান। সাড়ে ৩টার দিকে বাচ্চাকে পুনরায় দুধ খাওয়ানের জন্য খোদেজা বেগম ফিরে এসে কেবিনের দরজার তালা আটকানো দেখেন। ডাকাডাকির পরও ভেতর থেকে কেউ দরজা না খোলায় কর্তব্যরত সেবিকাকে তিনি বিষয়টি জানান। পরে কেবিনটির ইনচার্জ সেবিকা অনুরাধা এসে দরজার অতিরিক্ত চাবি দিয়ে খুলে ভেতরে ঢুকে মরদেহ দেখতে পান।
খবর পেয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল ইসলাম আলমগীর, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, টাঙ্গাইলের সহকারি পুলিশ সুপুার (মির্জাপুর সার্কেল) দীপঙ্কর কুমার ঘোষ ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. জুবায়ের হোসেনসহ টাঙ্গাইলের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কুমুদিনী হাসপাতালে যান। সেখানে তার সহকর্মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
রেদওয়ানা ইসলামের মামি খোদেজা বেগম ও মর্জিনা বেগম হাসপাতালের মেঝেতে কান্না করতে করতে জানান, শিশুটিকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পর যখন তারা বাইরে বের হন তখন তার স্বামী কেবিনেই ছিলেন। ফিরে এসে তাকে আর দেখতে পাননি।
কুমুদিনী হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক (অপারেশন) অনিমেষ ভৌমিক জানান, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি তাৎক্ষণিক প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।
সহকারী পুলিশ সুপারার দীপঙ্কর কুমার ঘোষ জানান, মরদেহের গলায় ওড়না পেঁচানোর দাগ দেখতে পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে। নিহতের স্বামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।