রংপুরের পীরগঞ্জে ছেলের হাতে বাবা খুন হওয়ার ৪ বছর পরে পিবিআই পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে। সেই সাথে হত্যার অভিযোগে ছেলেকে গ্রেফতার করেছে।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চাপাবাড়ি গ্রামের মৃত নয়া মিয়ার ছেলে দেলদার মিয়াকে (৬০) রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেলদার মিয়া দুইদিন পরে মারা যান। এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা হয়। কিন্তু ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ভিন্ন আসে। পরে স্বাভাবিক মৃত্যুর মামলাটি কোতয়ালি থানা হতে পীরগঞ্জ থানায় পাঠানো হলে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করা হয়।
পীরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করতে না পেরে গত ২০১৯ সালের ৫ জুলাই চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেন। আদালত মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট অগ্রাহ্য করে পিবিআই রংপুর জেলাকে অধিকতর তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করলে মামলাটির তদন্তভার এসআই মো. শফিউল আলমের উপর অর্পণ করা হয়।
পিবিআই তথ্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে ও বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্তের মাধ্যমে জানতে পারেন ঘটনার দিন দেলদার মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রীর কন্যা দেলোয়ারা বেগম তার শ্বশুর বাড়ি থেকে নিজ পিত্রালয়ে কিছু বাঁশ ও বাঁশখড়ি নেওয়ার জন্য আসে। এ বিষয়ে দেলদার মিয়ার চতুর্থ স্ত্রী শাহার বানুর সঙ্গে দেলোয়ারা বেগমের ঝগড়া বিবাদ হয়। বাঁশঝাড়ে দেলোয়ারা বেগম বাঁশ কাটতে গেলে দেলদার মিয়া সেখানে গিয়ে বাধা সৃষ্টি করে। তখন দেলোয়ারা বেগমের আপন ভাই সোহেল মিয়া ওরফে লেবু মিয়া (৩৭) ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তার আপন বাবার সাথে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পরে এবং এক পর্যায়ে বাঁশঝাড়ে থাকা কাটা বাঁশ হাতে নিয়ে তার দেলদারের মাথার পেছনের অংশসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করলে দেলদার মিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মৃত্যুর ঘটনাকে দুর্ঘটনা অর্থাৎ বাঁশ কাটতে গিয়ে আকস্মিক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে মৃত্যু হয় মর্মে প্রচার করে। এরপর সোহেল মিয়া ওরফে লেবু মিয়া গাঁ ঢাকা দেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি পিবিআই পুলিশ সোহেল মিয়া ওরফে লেবু মিয়াকে গ্রেফতার করে। পরে লেবু মিয়া হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
এ বিষয়ে পিবিআই রংপুর জেলার পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন বলেন, আপন ছেলে তার বাবাকে হত্যা করায় এবং পরিবারের লোকজন আন্তরিকভাবে সহায়তা না করায় মামলার রহস্য উদঘাটনের সময় লেগেছে। তবে দীর্ঘ ৪ বছর পরে হলেও হত্যার রহস্য উদঘাটন হওয়ায় জনমনে স্বস্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে।