টাঙ্গাইলের সখীপুরে আলোচিত স্কুল শিক্ষার্থী সামিয়া (৯) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাব্বির হোসেন (২১) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সে উপজেলার দাড়িয়াপুর উত্তর পাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে এবং একজন মুদি দোকানদার।
বুধবার রাতে পুলিশ তাকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সামিয়া হত্যার ২২ দিন পর আসামি পুলিশ সাব্বিরকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর ঋণের টাকা জোগাড় করতে প্রথমে সামিয়াকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি এবং পরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সখীপুর থানা চত্বরে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সুপার জানান, সন্দেহজনকভাবে মুদি দোকানদার সাব্বিরকে বুধবার রাতে সখীপুর থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে সাব্বির হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেন।
সাব্বিরের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, ব্যক্তিগতভাবে সাব্বির ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য পাওনাদাররা তাকে নানাভাবে অপমান, অপদস্থ করতে থাকে। পরে সাব্বির এলাকার যে ব্যক্তির কাছে নগদ টাকা আছে তার সন্তানকে অপহরণের সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার দিন সকালে শিশু সামিয়া যখন প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ির দিকে রওনা দেয় তখন সাব্বির তার পিছু নেয়।
বাড়ির কাছে নিরাপদ স্থানে এলে তিনি হাত দিয়ে সামিয়ার মুখ ও গলা চেপে ধরে একটি বাঁশঝাড়ের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে সামিয়া আকুতি-মিনতি করে তাকে ছেড়ে দিতে বলে এবং এ ঘটনা কাউকে বলবে না বলে সাব্বিরকে জানায়। কিন্তু সামিয়া তাকে চিনতে পারায় শ্বাসরোধে হত্যা করে বাঁশের পাতা দিয়ে মরদেহ ঢেকে রাখা হয়। এরপর একটি নির্জন মাঠে বসে সামিয়ার বাবা রঞ্জু মিয়ার মুঠোফোনে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ইমু অ্যাপসে একটি অডিও ভয়েস পাঠানো হয়। পরে সেদিন রাতেই মরদেহটি কাঁধে করে বনের ভেতরে নিয়ে একটি নর্দমার মধ্যে রেখে কাদামাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, পুলিশের কাছে সাব্বির স্কুলছাত্রী সামিয়া হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তবে সামিয়াকে হত্যাকাণ্ডের কোনো পরিকল্পনা সাব্বিরের ছিল না। পাওনাদারদের অপমান সইতে না পেরে টাকা জোগাড় করতেই সামিয়াকে অপহরণ করে ওই যুবক। চিনতে পারায় এবং বিষয়টি পরিবারের লোকজনকে বলে দিয়ে বিপদে ফেলতে পারে এমন ধারণা থেকে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাতটার দিকে ওই ছাত্রী বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। প্রাইভেট পড়া শেষ হলে সহপাঠীদের সঙ্গে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বের হয়।
পথে একটি দোকানে সহপাঠীরা কেনাকাটা করতে দাঁড়ালে একাই মেয়েটি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। এদিকে বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় মা রুপা বেগম শিক্ষককে ফোন দিয়ে জানতে পারেন মেয়ে অনেক আগেই চলে গেছে। পরে মা মেয়েকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন। বাড়ির কাছাকাছি একটি স্থানে মেয়ের ব্যবহৃত জুতা পড়ে থাকতে দেখেন।
এর কিছুক্ষণ পর তার মোবাইল ফোনের ইমো অ্যাপসে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি অডিও বার্তা আসে।
অডিও বার্তায় বলা হয়, ‘আসসালামু আলাইকুম। আপনার মেয়ে ভালো আছে। টাঙ্গাইলে আছে, আজকের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা দিলে মেয়ে পাবেন। বিষয়টি পুলিশ ও এলাকার কাউকে জানাবেন না। জানালে আপনার মেয়ের ক্ষতি হবে।’
এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা রঞ্জু মিয়া সখীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে বনের ভেতর একটি নর্দমা থেকে সামিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে বাবা রঞ্জু মিয়া বাদী হয়ে সখীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দিন, সখীপুর থানা পুলিশ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের এসআই মাসুদ রানা বলেন, ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে সাব্বিরকে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হবে।