রাজধানীর কলাবাগানে ইংলিশ মিডিয়াম মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থী আনুশকাহ নূর আমিন হত্যায় গ্রেপ্তার হয়েছেন তার বন্ধু ইফতেখার ফারদিন দিহান। গ্রেপ্তার হওয়া দিহানের দাবি, পারস্পরিক সম্মতিতেই তার সঙ্গে আনুশকার শারীরিক হয়েছে। শারীরিক সম্পর্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ আনুশকাকে আনোয়ার খান মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায় সে। সেখানে ভর্তির আগে আনুশকাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
আজ শুক্রবার দুপুরে দিহানের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম এ তথ্যগুলো জানান রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান। তিনি জানান, আনুশকাকে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় আলামত সংগ্রহ করছে সিআইডি। এ ছাড়া দিহানের নামে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘আমরা দিহানের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠিয়েছি।’ ঘটনাটি নিয়ে সামাজিকমাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যাতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার না করেন, সে জন্য অনুরোধ জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুশকাকে ভর্তির আগেই মৃত ঘোষণা করে। আমরা জানার পর আনোয়ার খান মেডিকেল হাসপাতালে অভিযান চালাই। দিহানকে আটক করে হেফাজতে নিই। জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার ব্যাপারে স্বীকার করেছে। নিজেদের পারস্পারিক সম্মতিতেই তাদের দৈহিক সম্পর্ক হয়। মেলামেশার পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। আনুশকা অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখানে তার মৃত্যু হয়।’
রমনা থানার ডিসি আরও বলেন, ‘পরীক্ষা নিরীক্ষার সাপেক্ষ আনুশকার শরীরের নমুনা নেওয়া হয়েছে। ডিএনএ নেওয়া হয়েছে। সেটাইতেই প্রমাণ হবে, তারা দৈহিক মেলামেশা করেছে কিনা। এর বাইরে অন্য কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে কিনা। সেটার জন্য আমরা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট করতে দিয়েছি।’
ডিসি জানান, এ ঘটনায় আনুশকার বাবা বাদি হয়ে মামলা করেছেন। মামলার আসামি একজনই। ঘটনাটি নিয়ে অনেকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। আমি তাদের বিনীত অনুরোধ করতে চাই; নিহতের পরিবার বুঝে শুনেই মামলা করেছে। এর সঙ্গে যদি অন্য কেউ জড়িত থাকে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো ইন্ধন থাকলে কঠোরভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাজ্জাদুর রহমান আরও বলেন, ‘নিহতের পরিবারের অভিযোগ, তাদের মেয়েকে দিহানের বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এটা তাদের দাবি। আসামির বাবা রাজশাহীতে থাকেন। তার ভাই ব্যাংকার, নারায়ণগঞ্জে থাকে। গতকাল ছেলেটির মা বগুড়া যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর মেয়েটিকে সে ডেকে আনে বলে আমরা অনুমান করছি।’
কালাবাগানের এ ঘটনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আনুশকার বন্ধু দিহানকে একমাত্র আসামি করে তার বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আমাদেরও ধারণা, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেও তেমন রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। কারণ, ধর্ষণের পর তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল।’
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাবাগানের ডলফিন গলিতে ঘটনাটি ঘটে। রাতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হলে আনুশকার মা জানান, দিহানরাই তাকে কল করে জানায় আনুশকা অসুস্থ, সেন্সলেস হয়ে পড়েছে। ওরাই আনুশকাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল এ নিয়ে যায়। তিনি হাসপাতালে পৌঁছার আগেই আবার ফোন দিয়ে দিহান ও তার বন্ধুরা জানায় তার মেয়ে মারা গেছে। পরে তিনি হাসপাতালে গিয়ে দেখেন আনুশকার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থী আনুশকার রহস্যজনক মৃত্যু