ঢাকা থেকে ভোলাগামী গ্রীনলাইন-৩ লঞ্চের কেবিন থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমে এসব তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলা ইউনিট। হত্যায় জড়িত আরজুকে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে সাভারের নবীনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে পিবিআই ঢাকা জেলা ইউনিটের ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম জানান, বাচ্চু হত্যার ঘটনায় তার প্রথম স্ত্রী সুরমা আক্তার বাদী হয়ে গত ৩১ জুলাই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, বাচ্চু ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
এরপর তিনি কিছুদিন দ্বিতীয় স্ত্রী আরজুর সঙ্গে থাকেন। পরে তাদের বিচ্ছেদ হয়। গত ২৯ জুলাই সকাল ৭টার দিকে তিনি লঞ্চে বাড়িতে আসবেন বলে জানান। সেদিন স্বামীর ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে তা বন্ধ পান সুরমা। এতে সন্দেহ হলে তিনি বিষয়টি আত্মীয়-স্বজনকে জানান। সবাই খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে সদরঘাট নৌ থানার মাধ্যমে সংবাদ পান, লঞ্চের কেবিনে খাটের নিচে তার লাশ পাওয়া গেছে। লঞ্চের স্টাফদের মাধ্যমে জানতে পারেন, কেবিনে তার সঙ্গে কফি কালারের বোরকা পরা একটি মেয়ে ছিল। মৃত্যুর পর তাকে আর কোথাও দেখা যায়নি। মামলাটি পিবিআইর সিডিউলভুক্ত হওয়ায় পিবিআই ঢাকা জেলা স্ব-উদ্যোগে তদন্ত অধিগ্রহণ করে। এরপর পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনায় এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, বিয়ের পর বাচ্চু তার দ্বিতীয় স্ত্রী আরজুকেও জিনের বাদশা সেজে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করেন এবং তাকেও এ কাজে পারদর্শী করে তোলেন। এরমধ্যেই তিনি একাধিক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। জীনের বাদশা পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বাচ্চু যে অর্থ পেতেন তা ব্যয় করতেন অনৈতিক কাজে। এসব নিয়ে মতবিরোধের জের ধরে তাদের বিচ্ছেদ হয়। তবে তালাক দেওয়ার পরও বাচ্চু তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখেন।
এ পর্যায়ে একাধিক নারীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি আরজুর কাছে ধরা পরে। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে সুযোগ খুঁজতে থাকেন। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন রাতেও বাচ্চু তার এক পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে রাত কাটান। এরপরই আরজু তার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। তিনি জানতে পারেন বাচ্চু গ্রামের বাড়ি ভোলায় যাবেন। একই এলাকায় দু’জনের বাড়ি হওয়ায় তিনিও সঙ্গে যেতে চান। এরপর বাচ্চু লঞ্চের একটি স্টাফ কেবিন ভাড়া করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওঠেন। কেবিন ভাড়া নেওয়ার সময় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো তথ্য রাখেনি। লঞ্চে ওঠা থেকে নামা পর্যন্ত আরজুর বোরকা পরে ও মুখ ঢেকে ছিলেন।
আরজুকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, ঘটনার দিন সকাল ৮টার দিকে তারা সদরঘাট থেকে ভোলার ইলিশা যাওয়ার জন্য লঞ্চে ওঠেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আরজু দুধের সঙ্গে পাঁচটি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে নেন। লঞ্চের কেবিনে অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর পর সেই দুধ বাচ্চুকে খাওয়ানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে ওড়না দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে অন্য একটি ওড়না দিয়ে তার শ্বাসরোধ করেন আরজু। পরে লাশ কেবিনের স্টিলের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন। লঞ্চটি ভোলার ইলিশা ঘাটে পৌঁছালে তিনি নেমে যান। সেদিন দুপুর আড়াইটায় লঞ্চটি ইলিশা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। লঞ্চের স্টাফরা কেবিনটি তিন বাচ্চাসহ দুই নারীকে ভাড়া দেন। লঞ্চটি ঘাট ছেড়ে আসার প্রায় দুই ঘণ্টা পর একটি বাচ্চা খাটের নিচে ঢুকে পড়ে। তখন নারীদের একজন বাচ্চাটিকে বের করে আনতে গিয়ে লাশ দেখে চিৎকার শুরু করেন।