লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে ব্লেড দিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রিপা (১৯) নামে এক গৃহবধূর শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে দিয়ে হত্যাচেষ্টা করেছেন স্বামী, ভাসুর ও শাশুড়ি। আহত ওই গৃহবধূ বর্তমানে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
এঘটনায় রবিবার দুপুরে আহত ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে তার স্বামীকে প্রধান আসামি করে আরো পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এর আগে ওই দিন সকালে উপজেলার পূর্ব বিছনদই এলাকায় এঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন উপজেলার পূর্ব বিছনদই এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে ও রিপার স্বামী আল-আমিন এনামুল (২৫), এলামুলের ভাই আকিমুল (৩০) ও তার মা আঞ্জুয়ারা বেগম (৫০), আকিমুলের স্ত্রী অঁখি খাতুন (২৫), মৃত নজর শেখের ছেলে সফর আলী (৬০) ও সফর আলীর ছেলে জহরুল (৩৫)। আহত ওই গৃহবধূ উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর সিন্দুর্না এলাকার জহরুল হকের মেয়ে।
জানা গেছে, একবছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন রিপা ও এনামূল। প্রথমে এনামূলের পরিবার মেনে না নিলেও পরে ৪ লাখ টাকা যৌতুকের বিনিময়ে পারিবারিকভাবে আবারো তাদের বিয়ে হয়। বিয়েতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়া হয়। বাকি টাকা পরে দিতে চান রিপার বাবা। কয়েক মাস পর এনামূল যৌতুকের বাকি টাকার জন্য রিপা চাপ দিতে থাকে। আর এতে যোগ দেন রিপার ভাসুর ও শাশুড়ি।
এরই মধ্যে ১৬ মে রাত ৩টার দিকে নেশা করে এনামুল বাড়িতে এসে রিপাকে ঘুম থেকে তুলেই টাকার জন্য গালিগালাজ শুরু করেন। বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলেন। এতে রিপা রাজি না হলে শুরু হয় মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তাতে যোগ দেন ভাসুর ও শাশুড়ি। এরপর ব্লেড দিয়ে রিপার দুই হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে দেন তারা। এতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন রিপা। সকালে জ্ঞান ফিরলে চিৎকার শুরু করেন রিপা।
প্রতিবেশীরা রিপাকে আহত অবস্থায় দেখে তার বাবার বাড়িতে খবর দেন। পরে তার পরিবারের লোকজন এসে রিপাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। রবিবার বিকেলে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, আহত রিপা ব্যথা-যন্ত্রণায় বেডে শুয়ে ছটফট করছেন। তার দুহাতে অসংখ্য কাটা দাগ। এমনকি গলায় দড়ি দিয়ে পেঁচানোর দাগও রয়েছে।
রিপা বলেন, ‘ওরা অনেক খারাপ। আমার স্বামী নেশা করে। বাকি টাকা ঈদের আগেই আনতে বলছিল। আমি টাকা আনতে পারিনি। তাই ঈদের দিন আমাকে না খাইয়ে রাখে। নেশা করে রবিবার রাত ৩টার দিকে বাড়ি ফিরেই টাকার জন্য আমাকে মারধর শুরু করে। তার সাথে ভাসুর ও শাশুড়ি আমাকে মারধর করেন। এতে আমি জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফিরে দেখি আমার দুহাতে ব্লেড দিয়ে কেটে দেওয়ার দাগ। গলায় ক্ষত। আমাকে তারা হত্যা করার চেষ্টা করেন’।
এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত এনামুলের ফোন নম্বরে কল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্রই কলটি কেটে দেন তিনি। এরপর কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে আর পাওয়া যায়নি।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ডা. মহসিন আলম বলেন, ‘আহত ওই গৃহবধূকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা দাগ ও গলায় ক্ষত রয়েছে’।
হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।