ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই স্টোর রুম থেকে ৫০ টাকা দরে কম্পিউটার ও কেজি দরে সিপিইউসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও দুঃখ প্রকাশ আর ভর্ৎসনাতেই আলোচিত এ ঘটনার পরিসমাপ্তি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দপ্তর থেকে প্রেরিত চিঠিকে কর্মকর্তাদেরকে ভর্ৎসনা ও সতর্ক করা হয়। এর মধ্যে এস্টেট অফিসের উপরেজিস্টার টিপু সুলতান ও শাখা কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইনকে ভর্ৎসনা ও সতর্ক করলেও অভিযুক্ত শাখা কর্মকর্তা উকিল উদ্দিন ও সহকারী রেজিস্টার বকুল হোসেনকে পত্রপত্রিকায় নাম আসার বিষয়টি দুঃখজনক জানিয়ে ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে যত্নবান হতে বলা হয়।
এদিকে রেজিস্ট্রার দপ্তরের পৃথক আরেকটি অফিস আদেশে ওই চার কর্মকর্তাকে অন্য চারটি অফিসে বদলি করা হলেও এটি ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে শাস্তিমূলক কি না তা উল্লেখ করা হয়নি।
টিপু সুলতান ও নাজমুল হোসাইনকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি এস্টেট অফিসের তত্ত্বাবধানে স্টোর রুমে রক্ষিত মালামাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই বিক্রি করেছেন বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটিও এমনটি মনে করে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট থাকা একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নিকট থেকে কোনোভাবে প্রত্যাশিত নয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনাকে ভর্ৎসনাসহ ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক করা হল। ’
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিলে বন্ধ ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর রুম পরিষ্কারের কথা বলে এস্টেট টিপু সুলতান ও ওই তিন কর্মকর্তা মিলে সেখানে থাকা পুরাতন জিনিসপত্র বিক্রি করেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ৫০ টাকা দরে ৪৩টি কম্পিউটারের পুরনো মনিটর, ৪১ টাকা কেজি দরে ৪৩টি সিপিইউ, একটি পুরাতন টাইপিং মেশিন, প্রিন্টার, তিনটি ফটোকপি মেশিন এবং সামান্য দামে একটি পুরনো এসি, ২৩ কেজি ওজনের ছয়টি লোহার পাইপ, প্রায় সাড়ে ৪০০ কেজি পুরনো কাগজ বিক্রির অভিযোগ ওঠে।
এসব সামগ্রী প্রায় ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে এবং বিক্রির দেড় মাস পর্যন্ত তারা টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে জমা দেননি, যা পুরোপুরি নিয়মবহির্ভূত। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর টিপু সুলতানতকে শোকজ করা হয় এবং পরে দায়িত্ব থেকে অব্যাহিত দিয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়।
তদন্ত কমিটির সদস্য সাদ্দাম হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আসাদুর রহমান বলেন, ‘আমাদেরকে শুধু ঘটনা অনুসন্ধান করে জানাতে বলা হয়েছিল। আমরা সেভাবেই কাজ করেছি। অনুমতি ছাড়াই প্রক্রিয়া না মেনে বিক্রি ও টাকা জমা না দেওয়ার বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেছে। ’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘তদন্ত কমিটির রিপোর্টেই বলা হয়েছে যে তারা মৌখিক নির্দেশনার ভিত্তিতে এ কাজ করেছিল। তাদের প্রক্রিয়াগত কিছু সমস্যা ছিল। পরে টাকাও জমা দিয়েছে। এ জন্য তাদেরকে ভর্ৎসনার পাশাপাশি সতর্ক করা হয়েছে। ’
এদিকে অভিযোগ ওঠার পর কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে কোষাধ্যক্ষের মৌখিক অনুমোদনে বিক্রি করা হয়েছে জানালেও সে সময় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্টোর রুমের জিনিসগুলো বিক্রি করা দরকার, এটা আমাকে জানানো হয়েছিল। আমি বলেছি, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেইনটেন করে বিক্রি করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো জিনিস মৌখিক অনুমোদনে হয় না। তারা কার অনুমোদন নিয়ে জিনিস বিক্রি করল, এটা আমরা ছুটি শেষে দেখব। ’