বিয়ের পর নারীর কাছে সবচেয়ে নির্ভরতার জায়গা হয় স্বামীর ঠিকানা। তবে সেই ঠিকানা নির্ভরতার হয়ে ওঠেনি জরিনার (ছদ্দনাম)। বিয়ের কয়েকদিন যেতে না যেতেই স্বামী তাকে পাচার করেন ভারতে। শুধু তাই নয় জরিনার বোনকেও টাকার লোভে পাচার করেন ভারতে। অভিযুক্ত স্বামীর নাম ইউসুফ।
ভারতে নারী পাচারকারী চক্রের মূল হোতাসহ সহায়তাকারী চার সদস্যকে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গ্রেফতাররা হলেন রানা আহমেদ, মো. সুজন মিয়া, মো. সাহাবুদ্দীন ও নাইমুর রহমান ওরফে সাগর।
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) রাতে ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির মানবপাচার প্রতিরোধ ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত বছরের ৪ মে ঝিনাইদহের মহেশপুরের বাঘাডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ইউসুফ তার স্ত্রী ও শ্যালিকাকে ভারতে পাচার করেন। সেখানে ইউসুফের সহযোগীরা তাদের যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন। সেখানে যৌন নির্যাতনের শিকার হন ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ওই দুই বোন। পরে তারা কৌশলে যৌনপল্লি থেকে পালিয়ে ভারতীয় পুলিশের সহায়তায় এ বছরের ২২ মার্চ দেশে ফিরে আসেন।
পরে তাদের বাবা মামলা করেন এবং আদালতে জবানবন্দি দেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ইউসুফকে আগেই গ্রেফতার করে।
জবানবন্দিতে ওই দুই নারী জানান, বছর দুই আগে তারা গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি কারখানায় কাজ নেন। সেখানে থাকার সময় বড় বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন ইউসুফ, পরে বিয়েও করেন।
গত বছর বেশি বেতনে চাকরির কথা বলে ইউসুফ তার স্ত্রী ও শ্যালিকাকে ভারতের নারী পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দেন।
ওই দুই নারী বলেন, ইউসুফ যে নারী পাচারে জড়িত, নিজেরা বিপদে পড়ার আগে সেটা তারা বুঝতে পারেননি।
বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, সংসার করা ইউসুফের উদ্দেশ্য ছিল না। ভারতে পাচার করার জন্যই তিনি বিয়ে করেন। নতুন যে চারজন গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা তদন্তাধীন। এই চক্রের দেশি-বিদেশি সদস্যদের তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।