টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের সন্দেহে ছোট ভাইকে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রেখেছে প্রবাসফেরত এক যুবক। একাধিকবার বোঝানোর পরও সম্পর্ক থেকে সরে ‘না আসায়’ এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে গ্রেফতারকৃত ওই ব্যক্তি।
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) টাঙ্গাইল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন। এ ঘটনায় বড় ভাই সোহেল রানা ও তার বন্ধু পরেশ চন্দ্র শীলকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। এর মধ্য দিয়ে ২১ দিন পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত সোহেল রানা (৩৪) কালিহাতী উপজেলার পারখী গ্রামের মো. হানিফার ছেলে এবং পরেশ চন্দ্র শীল (৪০) দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার উত্তর দগরবাড়ি গ্রামের মৃত রমনীকান্ত শীলের ছেলে। নিহত মুকুল হোসেন (২৪) গ্রেফতারকৃত সোহেলের ছোট ভাই।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি পারখী গ্রামের চকপাড়ার ধানক্ষেতে কাদামাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় অর্ধগলিত মুকুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পোশাক দেখে লাশ শনাক্ত করে পরিবার। এ ঘটনায় ১৪ ফেব্রুয়ারি মুকুলের স্ত্রী কালিহাতী থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন।
হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার সিরাজ আমীন বলেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত মুকুলের প্রবাসফেরত বড় ভাই সোহেল ও তার বন্ধু পরেশকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল জানিয়েছে, বিদেশ যাওয়ার পর তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ায় মুকুল।
সোহেল বিদেশ থেকে ফেরার পরও এই সম্পর্ক অব্যাহত রাখে। একাধিকবার নিষেধ করলেও না শোনায় ক্ষিপ্ত হয়ে মুকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে সোহেল। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৭ জানুয়ারি রাতে বন্ধু পরেশকে সঙ্গে নিয়ে মুকুলকে ডেকে গলায় মাফলার বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর লাশ ধানক্ষেতে মাটিচাপা দেয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টাঙ্গাইল পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান আনসারী বলেন, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মুকুল হত্যায় তার বড় ভাই সোহেল ও পরেশের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। শনিবার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা জানায়, ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আশুলিয়া থেকে কালিহাতী এসেছিল। সেখান থেকে কোদাল সংগ্রহ করে।
ওই দিনে রাতে জরুরি কথা আছে বলে মুকুলকে পারখী গ্রামের মনির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে থাকতে বলে। রাত ১১টার দিকে মুকুলকে তারা স্কুলের আধা কিলোমিটার উত্তরে বগা বিলের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে গলায় মাফলার বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর পাশের জমিতে কোদাল দিয়ে গর্ত করে লাশ পুঁতে রাখা হয়। রবিবার বিকালে গ্রেফতারকৃতদের টাঙ্গাইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এরপর কারাগারে পাঠানো হয়।
টাঙ্গাইল পিবিআই কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন ও পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা।