আরিফুল ইসলাম সাব্বির, সাভার: পাঁচ মাস আগে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষকের হাতে নির্যাতনের শিকার হন নবম শ্রেণির ছাত্র আশিকুর রহমান আপন (১৫)। এখনও মাথার যন্ত্রণায় নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাকে। রাতে ভয়ে কেঁপে ওঠেন বারবার। পড়াশোনাও একরকম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এরমধ্যেই বিচার চেয়ে গত ২৫ মে আদালতে মামলা করে তার পরিবার। সেই মামলা মীমাংসার জন্য তদবির চালাচ্ছেন অভিযুক্ত শিক্ষক। এমনকি সামাজিকভাবে চাপও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন ঘটনা ঘটেছে ঢাকার ধামরাইয়ে।
আশিকুর রহমান আপন ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি ধামরাই পৌরসভার পাঠানটোলা এলাকার আসাদুর রহমানের ছেলে।
অভিযুক্ত ওমর ফারুক ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২১ মার্চ পড়া না পারার কারণ দেখিয়ে আপনকে মারধর করেন ওই শিক্ষক। এতে তার শরীরে জখম হয়। একপর্যায়ে সে জ্ঞান হারায়। তাকে উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে সেই সময় সামাজিকভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেন অভিযুক্ত শিক্ষক। এমনকি ১৮ মে তিনি মীমাংসা না করলে ওই শিক্ষার্থীর পরিবারকে জ্বালিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন। ভীত হয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার আদালতে মামলা দেন।
এদিকে মারধরের ঘটনার পাঁচ মাসেও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি ভুক্তভোগী আশিকুর রহমান আপন। হাসপাতালে নিয়মিত যেতে হওয়ায় এখন তার পড়াশোনাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মামলার বাদী ও আপনের চাচা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাতিজাকে নির্যাতন করেছেন ওই শিক্ষক। এমনকি তিনি পরেও হুমকি দিয়েছেন। আমরা মামলা করেছি। তিনি এখন মীমাংসার জন্য চেষ্টা করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে চাপ দিচ্ছেন। তবে আমরা এই ঘটনার আইনগত বিচার চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমার ভাতিজাকে এখনও নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। তিনি এখনও মাথার যন্ত্রণায় ভোগেন। রাতে ঘুম থেকে চিৎকার করে জেগে ওঠে। তার নির্যাতনকারীর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই আমরা।’
অভিযুক্ত শিক্ষক ওমর ফারুক মারধরের অভিযোগ স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘একটু মারছিলাম। পরে এলাকার গণ্যমান্যরা বসে সেটির সমাধান করে। আমি মাফ চেয়েছিলাম। এরপর শুনি মামলা হয়েছে। এখন মীমাংসা চাই। তাই চেষ্টা করছি।’
বিষয়টি নিয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি মীমাংসা চাই।’
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ উভয় পক্ষের মধ্যে মীমাংসার জন্য চাপ দিচ্ছেন ধামরাই পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এরপরই তিনি আর কিছু বলবেন না জানিয়ে ফোন কেটে দেন।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ঢাকা জেলার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল বলেন, ‘মামলার সরেজমিন তদন্ত করেছি। আরও তদন্ত চলছে। চিকিৎসার প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
মীমাংসার জন্য কোনো চেষ্টা করা হয়েছে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কোনো চেষ্টা করিনি। তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’