মাগুরার মহম্মদপুরে সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে পাওনাদারের হাতে স্ত্রীকে (২৫) তুলে দিতে বাধ্য হয়েছেন স্বামী। তবে ঘটনা এখানেই থেমে ছিল না। পরের স্ত্রীকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে ধর্মান্তরিত করার পাশাপাশি কথিত দ্বিতীয় স্বামী তাঁর ওপর দিনের পর দিন চালিয়েছেন নির্মম নির্যাতন, যা সইতে না পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে মাগুরা শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছোট্ট একটি চাকরি নিয়ে কোনো রকমে টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছেন মেয়েটি। আর ওই সুদ কারবারি ইসমাইল মণ্ডলের কবল থেকে বাঁচতে মেয়েটি তাঁকে তালাক দিয়ে জেলা লিগ্যাল এইডের আইনি সহায়তা নিয়েছেন। ঘটনাটি অনেক আগের হলেও জানাজানি হয় সম্প্রতি।
গত ৭ অক্টোবর দুই পক্ষের শুনানি শেষে জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত না করার বিষয়ে সতর্ক করেন। এর পরও ইসমাইল মণ্ডল মেয়েটিকে নানাভাবে হয়রানি করছেন। এমনকি লিগ্যাল এইডে অভিযোগ দেওয়ার কারণে গত কয়েক দিনে মেয়েটির নামে মাগুরার একাধিক আদালতে টাকা আত্মসাৎসহ একাধিক মামলা দিয়েছেন। মামলায় শুধু মেয়েটি নয়, অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও।
গৃহবধূর প্রথম স্বামী অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি নিজ ইচ্ছায় তাঁর স্ত্রীকে সুদে কারবারি ইসমাইল মণ্ডলের হাতে তুলে দেননি। বরং দাবি করা সুদের টাকা দিতে না পারায় ইসমাইল মণ্ডল তাঁর স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যান। অন্যদিকে ধর্মান্তরিত করে ওই গৃহবধূকে বিয়ে করার অভিযোগে অভিযুক্ত ইসমাইল মণ্ডল অবশ্য বলছেন, ওই নারী স্বেচ্ছায় তাঁকে বিয়ে করেছেন।
অসহায় ওই নারী জানান, আট বছর আগে তাঁর বিয়ে হয় মহম্মদপুরের এক পান ব্যবসায়ীর সঙ্গে। বিয়ের এক বছর পর তাঁদের একটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। বছরদুয়েক আগে তিনি জানতে পারেন একই এলাকার ইসমাইল মণ্ডল নামের এক ব্যাক্তির কাছ থেকে তাঁর স্বামী সুদে টাকা ধার নিয়েছেন। ইসমাইলের দাবি অনুযায়ী সুদে-আসলে যার পরিমাণ ৯ লাখ টাকা। ইসমাইল তাঁর স্বামীকে টাকা পরিশোধের জন্য নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছিলেন। টাকা দিতে না পারলে স্ত্রীকে তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চাপ দেন ইসমাইল। এমন পরিস্থিতিতে দুই বছর আগে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে যশোর নিয়ে ওই গৃহবধূকে ইসমাইলের হাতে তুলে দেন তাঁর স্বামী।
ওই গৃহবধূর দাবি, জোর করে বিয়ের পর প্রতারণামূলকভাবে ধর্মান্ত্মরিত করে প্রথমে ঢাকা নিয়ে একটি বাসায় আটকে রেখে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস শুরু করেন দুই সন্ত্মানের জনক ইসমাইল মন্ডল। মাস দুয়েক পর ইসমাইল তাকে মাগুরায় তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে। এর পর থেকে ইসমাইল, তার প্রথম স্ত্রী ও ছেলে ওই গৃহবধূর ওপর নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরম্ন করে। তাদের নির্যাতন সইতে না পেরে পাঁচ মাস আগে সেখান থেকে পালিয়ে এসে ইসমাইলকে দুই মাস আগে তালাক দেন। বর্তমানে তিনি মাগুরা শহরের এক নারীর আশ্রয়ে থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে ইসমাইল তার পিছু ছাড়ছে না। তার কর্মস্থলে গিয়ে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
গৃহবধূর প্রথম স্বামীর দাবী, তিনি ইসমাইলের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছিলেন, তা পরিশোধ করে দেন। তার পরও সে তার কাছে সুদে আসলে ৯ লাখ টাকা দাবী করে। টাকা দিতে না পারলে স্ত্রীকে তার হাতে তুলে দিতে বলে। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মাসত্মান দিয়ে তার স্ত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে তিনি মামলাও করেছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইসমাইল মন্ডল জানান, তিনি সুদের ব্যবসা করেন না। ওই গৃহবধূ স্বেচ্ছায় ধর্মন্তারিত হয়ে তাকে বিয়ে করেছেন। এখন তিনি তার স্ত্রীকে ফিরে পেতে চান।
জেলা লিগ্যাল এইডের আইনজীবি শাহিনা আক্তার ডেইলী বলেন, আইনিভাবে তালাক দিলে কোন নারীকে তার স্বামী আর স্ত্রী হিসেবে দাবী করতে পারেন না। তাছাড়া তালাক দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে তা এমনিতেই কার্যকর হয়ে যায়। তালাক দেওয়ার পরও যদি কোন ব্যক্তি তার সাবেক স্ত্রীকে উত্যক্ত বা ভয়ভীতি দেখায় তবে সেটা বড় ধরনের ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী মমতাজ বেগম বলেন, ‘বর্তমান সময়ে সুদের কারনে একটি নারীর ওপর যে অন্যায়, অত্যাচার করা হয়েছে তা অকল্পনীয়। এটি মধ্য যুগীয় বর্বরতাকে হার মানায়। নারী কোন ভোগ্যপন্য বা সম্পদ নয়, যা অর্থের বিনিময়ে হসত্মান্ত্মর করা যায়। মহিলা পরিষদ অসহায় ওই নারীর পাশে থেকে তাকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছি।’
মাগুরার পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, ‘ওই নারী এ ঘটনায় পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করেননি। তিনি অভিযোগ করলে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে।’
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন