সবজি, ডাব অথবা ফল বিক্রেতা সেজে প্রথমে একটি ফাঁকা বাসা টার্গট করে। পরে ওই ফাঁকা বাসায় গ্রিলকেটে রাতের বেলায় চুরি করে একটি চক্র। এই চক্রের সঙ্গে আরো অনেকে জড়িত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, রাজধানীর কলাবাগান থানার ডলফিন গলির একটি বাসার চুরির সূত্র ধরে চক্রটির সন্ধান পায় পুলিশ।
মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিসি মো. শহীদুল্লাহ।
এর আগে রাজধানীর কলাবাগান ও আদাবর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ সংঘবদ্ধ গ্রিলকাটা চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপি রমনা বিভাগের একটি দল। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মো. সোহেল, মো. ফরহাদ, মো. ইলিয়াচ শেখ ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম ওরফে আনোয়ার। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি বিদেশী পিস্তল, ১১১ রাউন্ড গুলি, তিনটি ম্যাগাজিন, তিন ভরি স্বর্ণ ও ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, অস্ত্র কেনাবেচা, চুরি-দস্যুতাসহ বড় অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে তারা অস্ত্র রাখতো এই চক্রটি। এই অস্ত্রের উৎস এবং কোথায় ব্যবহার হয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে।
ডিএমপির এই উপকমিশনার বলেন, কলাবাগান থানার ডলফিন গলির একটি বাসা থেকে ৭২ ভরি স্বর্ণ ও নগদ এক লাখ টাকা চুরির ঘটনায় জড়িত চোর চক্রের চারজনকে অস্ত্রগুলিসহ করা হয়। ২০ আগস্ট রাত ১টা থেকে ভোর সাড়ে ৫টার মধ্যে যেকোন সময় ডলফিন গলির একটি বাসার দ্বিতীয় তলায় গ্রিল কেটে অজ্ঞাতনামা চোরেরা ৭২ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ এক লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কলাবাগান থানায় মামলা করেন।
মামলাটি থানায় নথিভুক্ত হওয়ার পর নিউমার্কেট জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামানের নেতৃত্বে কলাবাগান থানার একটি টিম চোরাই মালামাল উদ্ধার ও চোর চক্রকে গ্রেপ্তারের জন্য কাজ শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় কলাবাগান থানা ও রাজধানীর আশপাশের পাঁচ শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে চুরির ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের অবস্থান শনাক্ত করে কলাবাগান থানার ডলফিন গলি থেকে সোহেল, ফরহাদ ও ইলিয়াচকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চোরাই স্বর্ণ কেনা-বেচায় জড়িত স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. আনোয়ারুল ইসলামকে আদাবর থানার নবোদয় হাউজিং বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিদের বরাত দিয়ে রমনা বিভাগের উপকমিশনার বলেন, এদের কেউ ভ্যানে করে ডাব, সবজি বা ফল বিক্রেতা সেজে ফাঁকা বাসা টার্গেট করে। পরবর্তী সময় সুযোগ বুঝে গ্রিল কেটে চুরি করে। আর চুরি করার সময় কোন ধরনের বাধা আসলে ভুক্তভোগীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মূল্যবান মালামাল কেড়ে নেয় তারা। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সকল সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির কলাবাগান থানায় অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। তাদের ১০ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়েছে পুলিশ।
ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ, নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহেন শাহের তত্ত্বাবধানে এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামানের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।