শ্বশুর যৌতুক না দেয়ায় স্ত্রীকে অচেতন করে চুল কেটে মুখ পুড়িয়ে দিয়েছেন স্বামী আরিফ হোসেন। এ অভিযোগ করেছেন আরিফের নববধূ মিতু খাতুন (১৮)।
গত ২৫ জানুয়ারি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পৌর সদরের বাবুপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) মিতুর বাবা থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় আরিফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মিতু খাতুন ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের আরমবাড়িয়া এলাকার মজিবর রহমানের মেয়ে। অভিযুক্ত স্বামী আরিফ একই উপজেলার পৌর সদরের বাবুপাড়া এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে।
থানায় দায়ের করা অভিযোগের বরাত দিয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) অরবিন্দ সরকার জানান, প্রায় দুমাস আগে মিতুর সঙ্গে আরিফের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পরই আরিফ শ্বশুরবাড়ি থেকে এক লাখ যৌতুক এনে দেয়ার জন্য স্ত্রী মিতুর ওপর চাপ দিতে থাকেন। সম্প্রতি বলেন, তার ছোট ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ছয় লাখ টাকা জরুরি ভিত্তিতে দিতে হবে। এতে আরিফের শ্বশুর মজিবর রহমান অপরাগতা প্রকাশ করলে তার মেয়ের ওপর নেমে আসে নির্যাতন।
আহত মিতু খাতুন জানান, ঘটনার দিন (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে স্বামী আরিফ তাকে পানির সঙ্গে কৌশলে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তা পান করান। এতে তিনি ঘুমিয়ে পড়লে প্রথমে তার মাথার চুল ও ভ্রু কেটে দেন আরিফ। এমনকি মুখে বিষাক্ত তরলও স্প্রে করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। খবর পেয়ে মিতুর বাবা-মাসহ স্বজনরা এসে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় মিতুকে।
মিতুর বাবা মজিবর রহমান জানান, যৌতুকের জন্য তার মেয়েকে হত্যার উদ্দেশ্যে এমন নির্যাতন করা হবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। তিনি বলেন, থানায় অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে। অভিযুক্ত জামাই আরিফ হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন মজিবর রহমান।
ওসি (তদন্ত) অরবিন্দ সরকার জানান, মিতুর মুখে অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে কি-না, তা তারা নিশ্চিত নন। তবে কী ধরনের তরল পদার্থ দেয়া হয়েছে, তা চিকিৎসকরা ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করে ভালো বলতে পারবেন। তিনি আরও জানান, মিতুর মুখের চামড়া পুড়ে উঠে গেছে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ঈশ্বরদী সার্কেল) ফিরোজ কবীর জানান, ঘটনার চপার দিন পর বৃহস্পতিবার বিকেলে ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মিতুর বাবা। অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত স্বামী আরিফকে শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) গ্রেফতার করা হয়। তাকে পাবনা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।