নরসিংদীর রায়পুরায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে শাবনুর আক্তার (১৯) নামে এক বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীকে মেরে আহত করার খবর পাওয়া গেছে। পরে ওই তরুণীরর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা চালিয়ে শিশু ও নারীসহ চারজনকে আহত করাসহ ভাঙচুর ও মালামাল লুটের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল মিয়া ও লোকের বিরুদ্ধে।
আহত শাবনুর উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর এলাকার মৃত তাজুল ইসলামের মেয়ে। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ওই ঘটনায় রক্তাক্ত জখম শাবনুরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
আহতরা হলেন, একই ইউনিয়নের কালিকাপুর এলাকার মো. বজলু মিয়া (৬৫) তার ছেলে বশির মিয়া (২০), মো. নজরুল মিয়ার ছেলে রাজন মিয়া (২৩) ও মো. আক্তার মিয়ার স্ত্রী, ছেলে আশরাফুল (৫)। তাদের মধ্যে যুবক বশিরকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায় বাবুলের লোকেরা। পরে প্রশাসনের চাপে তাকে ছেড়ে দেয় বলে দাবি করে পরিবার।
বর্তমানে বশির হাসপাতালে চিকিসাধীন। বাকিরা স্থানীয় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
চাঁনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিল হোসেন ফুল মিয়া জানান, সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় তাকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাদক, চাঁদাবাজি, হত্যাসহ নানা অভিযোগে বাবুল মিয়াকে দলীয় পদ থেকে মৌখিকভাবে অব্যাহতি দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। এতে বাবুল চরমভাবে ক্ষুব্ধ হন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, বাকপ্রতিবন্ধী শাবনুর নামে এক তরুণীকে হত্যার উদ্দেশে মেরে রক্তাক্ত জখম করে বাবুলের লোকেরা। পরে ওই তরুণীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে তার ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির মিয়ার বাড়িতে টেঁটা, দা, বল্লম নিয়ে হামলা চালিয়ে এক শিশু ও নারীসহ চারজনকে মেরে আহত করা হয়েছে। ওই সময় ১০টি ঘর, একটি দোকানে ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে বাবুলের লোকেরা জানান ইয়াছিল হোসেন ফুল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বাবুল মিয়া সঙ্গে একই ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক নাসির মিয়ার বিরোধ চলে আসছিল। গত বছর দুই নেতার দ্বন্দ্বে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে মারা যান এক স্কুলছাত্রী। এ ঘটনার পর ছয় মাস এলাকার ছাড়া ছিলো বাবুল ও তার অনুসারীরা। পরে মামলার বাদীর সঙ্গে মিমাংশা করে এলাকায় ফেরেন তারা।
স্থানীয় শফিকুল ইসলাম রাব্বানী ও মো. জামাল মিয়া বলেন, বাবুল মিয়া ওরফে গাঁজা বাবুল গত চার বছরে এলাকায় পাঁচটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। যার একটিও বিচার হয়নি। এলাকায় মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, জমি দখল, নারী নির্যাতন, বিদ্যুৎ সংযোগের নামে টাকা আত্মসাৎ, হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটের মতো নানা অপরাধে জড়িত বাবুল। এলাকার শান্তির লক্ষের বাবুলকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে আহত বাকপ্রতিবন্ধী শাবনুরে পরিবারে কাউকে পাওয়া যায়নি। আশপাশের কেউ এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।
এ ব্যাপারে জানতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল মিয়ার ফোনে একাধিক বার কল দিয়েও বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসাইন বলেন, বাবুলকে মৌখিক ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি ঘটন করা হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বর্তমান ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেব দুলাল দে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীকে কোন পক্ষ মেরে আহত করেছে তা জানা যায়নি। এ ঘটনায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত থানায় মামলা দায়ের হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।