English

23 C
Dhaka
শনিবার, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
- Advertisement -

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাকাতির যে ধরনের খবর পাওয়া যাচ্ছে

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির আতঙ্কে ভুগছে সাধারণ মানুষ। অনেকেই বলছেন, তারা রাতে ঘুমাতে পারছেন না।

এদিকে পুলিশবিহীন ঢাকায় ডাকাতের হাত থেকে সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা করতে মহল্লায় মহল্লায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন এলাকাবাসী।

গত দুই দিন ধরেই ঢাকার বেশ কিছু এলাকা থেকে খবর এসেছে যে তাদের এলাকায় ‘ডাকাত পড়েছে’।  কেউ সেই ডাকাত স্বচক্ষে দেখেছেন বলে জানাচ্ছেন, কেউ আবার কেবলই শুনেছেন।

কেউ কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছেন, চিলে কান নিয়েছে শুনে দৌঁড়াবেন না। অর্থাৎ, তারা এই গোটা বিষয়টিকে ‘গুজব বা সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার কৌশল’ মনে করছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে ‘ডাকাতি’ বিষয়ে কথা বলেছে । যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা সবাই কাল রাতে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে সাহায্য চেয়ে বা মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে পোস্ট করেছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন গ্রুপেও তাদের মতামত জানিয়েছেন।

এদের বাইরেও অনেকেই অনলাইন ও অফলাইনে বলেছেন যে গত রাতে তাদের এলাকার মসজিদগুলো থেকে জনসচেতনার উদ্দেশ্যে মাইকিং করা হয়েছে।

যেসব এলাকা থেকে ডাকাতির খবর বা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার খবর বেশি পাওয়া যাচ্ছে তার মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মিরপুর, কালশী, ইসিবি চত্বর ও আশকোনা ইত্যাদি।

দুইটা বাচ্চা গুলিবিদ্ধ হইছে: ঢাকার একটি অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিক মেরিনা মিতু নিজে এই ডাকাতির সাক্ষী হয়েছেন।

তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, বুধবার রাত ৯টার দিকে অফিস থেকে ফিরে ইসিবি চত্বরে বন্ধুদের সঙ্গে একটি চায়ের দোকানে বসে গল্প করছিলেন।

তখন ২০০-৩০০ লোক একযোগে ‘ডাকাতি করতে ঢুকছিলো এবং ঢুকেই ওরা গুলি করতে শুরু করে।’

ওদের ‘এলোপাথারি’ গুলিতে ‘দুইটা বাচ্চা গুলিবিদ্ধ হইছে। বাচ্চা দুইটা রাস্তায় খেলতেছিল।’

গোলাগুলি হওয়ায় প্রাথমিকভাবে মিজ মিতুসহ অন্যান্য এলাকাবাসীরা এক পাশে সরে গেলেও পরক্ষণেই তারা দলবদ্ধ হন।

তিনি বলেন, ‘আশেপাশের ছেলেপেলেদেরকে খবর দেই। আমরাও সংখ্যায় প্রায় ২০০ জন হয়ে যাই তখন। তারপর এলাকা ঘেরাও দেই। সবগুলা এক্সিট গেটে অবস্থান নেই।’

তিনি জানান, এই ঘটনা যখন ঘটে, তখনই সেনাবাহিনীকে কল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইসিবি একপ্রকার ক্যান্টনমেন্ট এরিয়ার কাছে হলেও কল দেওয়ার এক ঘণ্টা পরও সেনাবাহিনী আসেনি।

ওই সাংবাদিক আরও বলেন, ‘পরে মাটিকাটা চেকপোস্টে এক ফ্রেন্ডকে বাইক নিয়ে পাঠাই। ও গিয়ে বলার পর আর্মি আসছে। সেনাবাহিনী আসার আগ মুহূর্তে ‘দুই-তিনজন টিভি নিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু তখনই সেনাবাহিনী চলে আসায় ওদেরকে ধরে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘তখনও ভেতরে প্রচুর লোক। আমরা ভেতরে ঢুকতে পারছিলাম না। কারণ তাদের সবার হাতে অস্ত্র। তারা ভেতর থেকে ফায়ার করছিল। আর্মিকে তখন ভেতরে অপারেশন চালাতে বলা হলেও তারা বলে যে আমাদের ওইরকম মানুষ নাই। পরে আসবো বলে চলে গেছে। কিন্তু আর্মি আর আসে না।’

কিন্তু তার কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে দুইজন বের হলে তাদের ধরে ফেলে এলাকাবাসী।  ‘ওরা মাইর খাওয়ার পর স্বীকার করে যে স্থানীয় এক নেতা ওদেরকে ভাড়া করে আনছে।’

‘তারা কোনও দল করে না। এরা ছিনতাইকারী। এটাই এদের পেশা, বিহারি ক্যাম্প থেকে আসছে। ওই নেতার হয়ে টাকার বিনিময়ে এই ডাকাতি করতে আসছে তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় ফের পাঁচ ছয়টা গাড়ি নিয়ে সেনাবাহিনী আসে এবং ওই দু’জনকেও তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মিজ মিতু জানান, সেনাবাহিনী এসে লাগাতার টহল দেয়, মাইকিং করে, সাইরেন বাজায়।’

মঙ্গলবার রাত প্রায় ১২টার দিকে ইসিবি’র পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। মিজ মিতুসহ সব এলাকাবাসী যার যার বাসায় চলে যান। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভেবে সেনাবাহিনীও চলে যায়।

তিনি বলেন, ‘বাসায় আসার দুই ঘণ্টা পরে আরেক দফা হইছে। যারা ভেতরে লুকায়ে ছিল, আর্মি চলে যাওয়ার পর তারা আবার বের হইছে। পুরা একটা গ্রুপ। কিন্তু এলাকা পাহারা দেওয়ার জন্য আমাদের কিছু বন্ধু, এলাকাবাসী বাইক নিয়ে ঘুরছিল। তখন ওদেরকে ধাওয়া করা হয় এবং ওরা ইসিবি থেকে বের হয়ে যায়।’

বৃহস্পতিবার সকালে মিজ মিতু জানান, এই সমস্ত ঘটনায় গতকাল এক নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন তিনি।

ডাকাত আতঙ্ক: বৃহস্পিতিবার রাতে ধানমন্ডি এলাকা থেকে ফেসবুকে ডাকাত বিষয়ক পোস্ট দেন রিদম নাথ নামক একজন।

যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাল রাতে তাদের বাড়ির ঠিক পাশের বিল্ডিংয়ে এক দল লোক এসে জিনিসপত্র লুট করতে শুরু করে।

কিন্তু তখন এলাকার মানুষজন পাহারা দেওয়ায় সবাই টের পেয়ে যায় এবং ওদেরকে ধাওয়া করে।

ঢাকার একজন সাংবাদিক অনির্বাণ বিশ্বাস, তিনিও গতকাল রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন।

তিনি সেখানে লেখেন, রাত সোয়া ১২টা থেকে মোহাম্মদপুর, বসিলা, ওয়েস্ট ধানমন্ডি এলাকায় লুটপাট করতে বিভিন্ন দিক থেকে ঢুকে পড়ে ডাকাত, নাশকতাকারী বা দুর্বৃত্তরা।

‘এলাকার মানুষ লাঠি হাতে বাসা থেকে রাস্তায় নেমেছে। এর মধ্যে মসজিদ থেকে মাইকিং করে রাস্তায় নামতে বলা হয়েছে এবং সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে,’ তিনি যোগ করেন।

ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে ঢাকার আশকোনাতেও। ঢাকার একটি দৈনিকের সাংবাদিক সাজিদা ইসলাম পারুল বিবিসিকে বলেন, ‘গতকাল রাতে পশ্চিম আশকোনায় ডাকাত পরেছে।’

এসকল ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ কিংবা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে কোনো দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নেওয়াও সম্ভব হয়নি।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন