এ মাসের অন্যতম আলোচিত ঘটনা খুলনার মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমরে নিখোঁজ হওয়া। টানা ২৮ দিন নিখোঁজ থাকার পর ২৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাতে ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করা হয় নিখোঁজ রহিমা বেগমকে।
এতদিনে নিখোঁজের বিষয়টি সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। নিখোঁজ রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নান মায়ের সন্ধানে থানায় মামলাসহ সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি, মানববন্ধন ও বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার কাছে ধরনা দিচ্ছিলেন। মরিয়মের করা মামলায় জেলেও যেতে হয়েছে ছয়জনকে।
এদিকে, ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় দাফন হওয়া এক নারীর লাশ নিজের মায়ের বলে দাবি করেছিলেন খুলনার দৌলতপুরের মরিয়ম মান্নান। শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ফুলপুর থানায় গিয়ে উদ্ধারকৃত নারীর পোশাক ও সংরক্ষিত আলামত দেখে এমন দাবি করেন তিনি। তার এমন দাবির একদিন পরই নিখোঁজ রহিমা খাতুনকে (৫২) জীবিত অবস্থায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ফুলপুর উপজেলায় দাফন হওয়া লাশটি আসলে কার?
এ বিষয়ে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে জানান, ‘১০ সেপ্টেম্বর বস্তাবন্দি অবস্থায় ওই লাশটি আমরা উদ্ধার করেছিলাম। প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকাণ্ড বলে মনে হয়েছে আমাদের। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা লাশের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। ওই দিনই অজ্ঞাত লাশটি উদ্ধারের খবর পেয়ে নওগাঁ থেকে এক নারী ফুলপুর থানায় আসেন। তিনি দাবি করেন, লাশটি তার নিখোঁজ মেয়ের হতে পারে। এরপর আমরা তাকে সব আলামত দেখাই। কিন্তু তাতে তার সন্দেহ থেকে যায়। এরপর আমরা তার মেয়ের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে অনুসন্ধান চালাই। দুদিন পর তার মেয়েকে ঢাকার বসুন্ধরা থেকে উদ্ধার করে দিই। এর মধ্যে লাশের দাবিদার না পাওয়ায় দুদিন পর দাফন করা হয়।’
ওই লাশটি তাহলে কার এমন প্রশ্নে ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমার থানা ও আশপাশের এলাকায় খোঁজ নিয়েছি আমরা। এখানে কেউ নিখোঁজ নেই৷ আমাদের ধারণা, অন্য কোনও স্থানে হত্যা করে ওই নারীকে বস্তাবন্দি করে এখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে। পরিচয় নিশ্চিত হতে আমরা ইতোমধ্যে ওই নারীর ছবি দিয়ে পোস্টার লাগিয়েছি বিভিন্ন এলাকায়। পত্রপত্রিকায় তা প্রকাশ করেছি। বেতার বার্তায় ছবিসহ বিভিন্ন জেলায় খবর পাঠিয়েছি। এখনও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্তে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।’
জানা গেছে, গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ার নিজবাসা থেকে টিউবওয়েলে পানি আনতে নিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা। পরে আর ঘরে ফেরেননি তিনি। অন্যদিকে স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে ঝোপঝাড়ে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। এ সময় একই দিন রাতে মাকে খুঁজতে আত্মীয়-স্বজন, আশপাশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন সন্তানরা।
শনিবার রহিমা বেগমকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার করার পর নিখোঁজের মামলায় আটকৃতদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, ‘জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে আত্মগোপন করেছিলেন রহিমা বেগম। বিষয়টি জানতেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের সদস্যরা।’
এ মামলায় আটক রফিকুল আলম পলাশ ও নুরুল আলম জুয়েলের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ বলেন, তার ছোট ছেলে রফিকুল আলম পলাশ চাকরি করে এবং বড় ছেলে নুরুল আলম জুয়েল মুদি দোকানি। তার দুই ছেলেকে রহিমাকে কথিত অপহরণের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে জমির সীমানা নিয়ে মতবিরোধ থাকায় মামলা দিয়ে হয়রানি ও সম্মানহানি করা হয়েছে।
এ মামলায় আটক মহিউদ্দিন ও গোলাম কিবরিয়ার বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, মরিয়ম মান্নান নাটকবাজ। পুলিশ ও সাংবাদিকদের মিথ্যা কথা বলে প্রায় এক মাস বিভ্রান্ত করেছে। ময়মনসিংহে গিয়েও মরিয়ম নাটক সাজায়। তিনি আটককৃতদের মুক্তি এবং রহিমা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তির দাবি করেন।