কুমিল্লার মুরাদনগরে বিয়েবাড়িতে খাবার শেষে বরের হাত ধুইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে বকশিশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে বর ও কনেপক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছে।
আহতদের দেবিদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর বিয়ে সম্পন্ন না করেই বরপক্ষ কনের বাড়ি থেকে ফিরে গেছেন।
রোববার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নের নেয়ামতকান্দি গ্রামের আমির হোসেন মেম্বারের বাড়িসংলগ্ন হাজিবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বর মো. সাদেক হোসেন (২৬) দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের পশ্চিমপাড়া পাইঞ্জত আলী মুন্সীবাড়ির মো. ইসমাইল মুন্সীর ছেলে এবং কনে মোসা. সোনিয়া আক্তার (১৮) মুরাদনগর উপজেলার ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নের নেয়ামতকান্দি গ্রামের মো. শানু মিয়ার মেয়ে। বর এবং কনেপক্ষ আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে রোববার পারিবারিকভাবে বিয়ের দিন ধার্য ছিল। ওই দিন দুপুরের পর বরযাত্রী কনের বাড়িতে গেলে গেটের সালামি নিয়ে প্রথমে দুই পক্ষের কথা-কাটাকাটি হয়। পরে খাবারের একপর্যায়ে বরপক্ষকে খাবার পরিমাণে কম দেওয়ায় এবং বরের হাত ধোয়ানোর টাকা নিয়ে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষ হাতাহাতি থেকে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে বরপক্ষের ২০ জন ও কনেপক্ষের ১০ জন আহত হয়।
আহতদের মধ্যে সাইফুর ইসলাম, সায়মা বেগম, কামাল হোসেন, ফয়েজ আহমেদ, জুয়েল আহমেদ, বাবু, হেলালসহ কয়েকজনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় কনের বড় ভাই মো. গিয়াস উদ্দিন মুরাদনগর থানায় দায়েরকৃত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, বরপক্ষ ১৫০ জন বরযাত্রী নিয়ে আসার কথা থাকলেও তারা ১৬০ জন বরযাত্রী নিয়ে আসে। তাদের খাওয়াদাওয়া শেষ করার পর বরের হাত ধোয়ার বকশিশের দর-কষাকষিতে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
অভিযোগপত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেন, একপর্যায়ে কনেপক্ষের নারীদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ, মারধর ও শ্লীলতাহানি করে বরপক্ষের লোকজন। এ অবস্থায় বরপক্ষকে শান্ত করতে গেলে তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের লোকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় কনে সোনিয়া আক্তার, মো. সোহেল মিয়া, সানাউল্লাহ, মো. শিপন মিয়াসহ ৮ থেকে ১০ জন গুরুতর আহত হয়।
তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, বরপক্ষের লোকজন কনের কক্ষে ঢুকে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে বরের ভাই মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা বিয়েবাড়ির গেটে আসার পর গেটের বকশিশের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। আমরা পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার পর আরও ৫০০ টাকা দিলে কনেপক্ষের লোকজন গেটের চেয়ার-টেবিল ছুড়ে ফেলে দেয়।
তিনি বলেন, বরযাত্রী ১৩০ জন যাওয়ার কথা থাকলেও ১২০ জন গিয়েছি। তারপরও বরপক্ষের লোকদের খাবার দিতে পারে নাই। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে বরের শেরওয়ানি ছিঁড়ে ফেলে। আমাদের নারীদের ওপরও মারাত্মক হামলা চালায়। আমি থামাতে গেলে মারধরের আঘাতে অচেতন হয়ে পড়ি।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, বরপক্ষকে খাবার কম দেওয়াতে উভয় পক্ষের মারামারির অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।