বগুড়ার শাজাহানপুরে স্কুলছাত্র নওফেল শেখের (১৪) রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। ধূমপানের জন্য ডেকে নিয়ে নওফেলের গলায় মাফলার পেঁচিয়ে হত্যা করে তারই এক বন্ধু (১৬)। মরদেহ জঙ্গলে ফেলে নওফেলের কাছে থাকা মোবাইল ফোন নিয়ে যায় সে। সেই ফোন বিক্রির টাকায় বান্ধবীকে নিয়ে হোটেলে ওঠে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
নওফেল বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার দাড়িগাছা গ্রামের ইসরাইল শেখের ছেলে ও দাড়িগাছা ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেফতার কিশোর পড়াশোনা না করলেও নওফেল ছিল তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা দাড়িগাছা গ্রামের বিভিন্ন জঙ্গলে গিয়ে মাঝে মধ্যেই ধূমপান করতো। দুই মাস আগে জমি বিক্রি করে ১৮ হাজার টাকায় একমাত্র ছেলে নওফেলকে স্মার্টফোন কিনে দেন বাবা। এরপর থেকেই নওফেলের ফোনটি হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে তার বন্ধু।
তিনি আরও বলেন, ১৮ জুন নওফেলের জন্মদিন ছিল। এদিন বেলা ১১টার দিকে নওফেলকে ধূমপানের কথা বলে কৌশলে জঙ্গলে নিয়ে যায় তার ওই বন্ধু।
জঙ্গলের একটি ইউক্যালিপটাস গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে ধূমপানের সময় নওফেলের গলায় মাফলার পেঁচিয়ে গাছের সঙ্গে ফাঁস দেয় বন্ধু। নওফেল নিস্তেজ হয়ে পড়লে তার বন্ধু পাশের জমি থেকে একটি বাঁশের খুঁটি এনে নওফেলের মাথায় আঘাতে করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর মরদেহ গভীর জঙ্গলে ফেলে দিয়ে মোবাইল সেটটি নিয়ে সেখান থেকে চলে যায় সে।
পুলিশ সুপার বলেন, ওই কিশোর বগুড়ার শেরপুর থেকে তার এক বান্ধবীকে শহরে ডেকে নেয়। দুজন একত্রে নিজেদের ভাই বোন পরিচয় দিয়ে শহরের সাতমাথায় একটি দোকানে ৫ হাজার টাকায় মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে। সেখান থেকে তারা দুজন বগুড়া শহরের গালা পট্টির একটি আবাসিক হোটেলে গিয়ে একটি রুম ভাড়া করে। সেখানে বান্ধবীর সঙ্গে সময় কাটিয়ে তাকে দেড় হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করে।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর ২০ জুন বিকেলে জঙ্গল থেকে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয় লোকজন গিয়ে নওফেলের মরদেহ শনাক্ত করে। এরপর থেকেই তার বন্ধু পলাতক ছিল। মরদেহ উদ্ধারের পর গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়।
পুলিশের টিম প্রথমে সাতমাথা থেকে নওফেলের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে। এরপর ফোনের সূত্র ধরে আটক করা হয় নিহতের বন্ধুকের কথিত বান্ধবীকে। পরে পুলিশের একটি দল নিহতের বন্ধুকে ঢাকার টঙ্গী থেকে গ্রেফতার করে। তার তথ্যে জঙ্গল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাফলারটি উদ্ধার করা হয়।
অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরকে তার বান্ধবীসহ রুম ভাড়া দেওয়ায় হোটেল টুইন ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।