বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) চাঁদাবাজি ও শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে শেরপুর উপজেলার ছোনকা বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার সজল কুমার ঘোষ শহরের রহমাননগর এলাকার মৃত সুমেন ঘোষের ছেলে। এছাড়াও তিনি বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
প্রায় অর্ধযুগ ধরে বগুড়া আইএইচটি ছাত্রবাসের ২১৮ নম্বর কক্ষ দখল করে বহিরাগত সজল ঘোষ প্রতিষ্ঠানটিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। এটিকে তিনি নির্যাতন ও মাদকের আসর হিসেবে ব্যবহার করতেন। এ কক্ষে সজলের নির্যাতনের শিকার হননি এমন শিক্ষার্থী পাওয়া ভার। দলীয় প্রভাব ও অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত উল হাছিনের মদদে তিনি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে হোস্টেলের ডাইনিং থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকা আদায়, সিট বাণিজ্য, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করে দেওয়ার কথা বলে অর্থ আদায়, ইন্টার্নশিপের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, প্রতিদিন ‘হাজিরা’ প্রথার নামে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন এবং শিক্ষা সফরের নামে ৭০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তোলা প্রায় ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সর্বশেষ গত ২৯ আগস্ট দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও হোস্টেলের মিল ম্যানেজার আমিনুল ইসলামকে মারধর করেন সজল ঘোষ।
এই মারধরকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রকাশিত হয়। প্রায় দু’ঘণ্টা সড়ক অবরোধ রাখার পর তারা কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। তারপর থেকেইে শিক্ষার্থীরা টানা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করে আসছিলেন।
এর এক পর্যায়ে গত ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন আইএইচটি শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান। এরপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করতে না পারায় গত রোববার শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টা থেকে রাত পর্যন্ত টানা ১০ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও চিকিৎসক নেতারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সজলকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
বগুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সজলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি মামলার একমাত্র আসামি ছিলেন।
এর আগে সোমবার বগুড়া আইএইচটির আলোচিত অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত-উল-হাসিনকে বদলি করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তাকে বাগেরহাটের ম্যাটসের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে বদলি করা হয়। একইসঙ্গে মাদারিপুরের ম্যাটসেও ডা. আমায়াত-উল-হাসিনকে সংযুক্ত করা হয়েছে।