পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় পরকীয়ার কারণে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কাপড় ব্যবসায়ী স্বামী শাকিল হোসেনকে দেবরের সহযোগিতায় হত্যা করেন স্ত্রী। এ ঘটনায় নিহত শাকিলের স্ত্রী মীম খাতুন জেলা আদালতের বিচারক মিলন আলীর কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
অভিযুক্ত আসামিরা হলেন নিহত ব্যবসায়ী শাকিলের স্ত্রী মীম খাতুন (২০) ও শাকিলের ছোটভাই সাব্বির হোসেন (২৫)।
আজ বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জানান, পরকীয়ার কারণে স্ত্রী মীম খাতুন ও ছোটভাই সাব্বির হোসেন মিলে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ব্যবসায়ী শাকিলকে। পরে মীম দেবরকে দিয়ে নাটক সাজান। মীম দেবরকে দিয়ে নিজের হাত পা বেঁধে মুখে টেপ লাগিয়ে স্বামীর লাশের পাশে পরে থাকে এবং বাইরে থেকে ঘরের দরজার সিটকিনি লাগিয়ে রাখে। বাড়ির মালিক এসে দরজা খুলে শাকিলের লাশ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে এবং মীমকে মুখ ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান। যাতে বিশ্বাস করার উপায় ছিল না যে মীম ও সাব্বির শাকিলকে হত্যা করেছে।’
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে নিহত শাকিলের স্ত্রী মীম খাতুন জেলা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন এবং ছোট ভাই সাব্বির হোসেন পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন। ক্লুলেস মামলা হওয়ার পরেও মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ব্যবসায়ী শাকিল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন পুলিশের একটি বড় সাফল্য।’
পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দেবর সাব্বিরের সঙ্গে পরকীয়া চলছিল ভাবি মীমের। শাকিলকে হত্যা করে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন মীম ও সাব্বির। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাব্বির ওড়না দিয়ে মীমের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ঘরের দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে দিয়ে চলে যান। এ সময় সাব্বির মীমের সঙ্গে গোপনে কথা বলার জন্য তাকে দেওয়া মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যান। বাসা থেকে চাবি নিয়ে গিয়ে মেইন গেট খুলে বের হন সাব্বির। এ সময় চাবিটি পাশের বাড়ির প্রাচীরের দেয়ালের ওপর রেখে দেন।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘গত ২৮ মে ভাড়া বাসায় খুন হন ঈশ্বরদী উপজেলার কাপড় ব্যবসায়ী শাকিল হোসেন। কিন্তু এই মামলার কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না। হত্যার পরপরই মীম ও সাব্বিরকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে দেবর-ভাবি দুজনই বলেন, আমরা একে অপরকে চিনি না।
অভিযুক্ত স্ত্রী মীম পুলিশকে জানান, পাঁচ থেকে ছয়জন যুবক এসে তাঁর হাত-পা বেঁধে স্বামীকে হত্যা করে ঘরে তালা দিয়ে চলে যায়।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘পুলিশ স্ত্রী মীমের কথার কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিল না। মীমের আলাদা একটি মোবাইলে সিমের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে সব অজানা তথ্য। ওই সিম থেকে শুধু সাব্বিরের আলাদা একটি সিমে কথা হয়েছে, অন্য কোনো নম্বরে একটি কল আসেওনি; করাও হয়নি।
মূলত পরকীয়ার কারণেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছে বলে স্বীকারোক্তিতে মীম আদালতকে বলেন।
গত ২৮ মে রাত ১২টার দিকে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সরকারি কলেজের সামনে রূপনগরের (মাহাতাব কলোনি) ভাড়া বাসায় শাকিলকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ৩০ মে দুপুরে নিহতের মামা কোরবান আলী বাদী হয়ে মামলা করেন।