নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লায় সুদের টাকা পরিশোধের জন্য এক বছর আগে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করা সেই শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় শিশুটিকে কিনে নেওয়া রানু (৪০) নামের এক নারীকে আটক করা হয়।
রোববার (১৭ এপ্রিল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) নাজমুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত নেমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার দক্ষিণ পাশা গ্রামে অভিযান চালিয়ে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করি। এ সময় রানু বেগমকে আটক করি। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
উদ্ধার হওয়া শিশুর মা রানী বেগম পটুয়াখালীর রাঙ্গাবারি থানার হান্নান চৌকিদারের স্ত্রী। তারা সপরিবারে ফতুল্লা থানার আলীগঞ্জ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কলোনিতে বসবাস করে আসছেন। আটক রানু বেগম মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার দক্ষিণ পাশের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মিয়ার স্ত্রী।
রানু বেগম জানান, তার একটি ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। কিন্তু ছেলেটি প্রতিবন্ধী। তাই তিনি একটি ছেলে দত্তক বা কেনার জন্য পরিচিতজনদের বলে রেখেছিলেন। এক বছর একমাস আগে ভাগনি সুমা তাকে ফোন করে জানান একটি বাচ্চা বিক্রি হবে। ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাচ্চাটি কিনেন রানু। বাচ্চাটির নাম রেখেছেন ইউসুফ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুমা জানান, বোন ঝর্না বেগমের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন একটি বাচ্চা বিক্রি হবে। বিষয়টি তার মামি রানু বেগমকে জানান। পরে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাচ্চাটি কিনে নেন রানু।
সুমার বোন ঝর্না বেগম জানান, আলীগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএর কলোনির শাহালমের ভাড়াটিয়া ফারুকের স্ত্রী রুবিনা তাকে ফোন করে জানান বাচ্চা বিক্রির কথা।
এ বিষয়ে রুবিনা জানান, প্রতিবেশী লাকী বেগম তাকে বাচ্চা বিক্রির কথা জানান। পরে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাচ্চাটি কিনে নেন রানু বেগম। টাকা নেন লাকী। এছাড়া বাচ্চাটিকে রানী বেগম নিজেই রানু বেগমের হাতে তুলে দেন।
উদ্ধার শিশুটির মা রানী বেগম জানান, দুই বছর আগে লাকী বেগমের কাছ থেকে তিনি পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নেন। দুই বছরে ওই টাকার বিপরীতে লাকী বেগমকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন তিনি। এমনকি এক বছর আগে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য তার সন্তানকে বিক্রি করে দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা নেন লাকী বেগম। চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল পুনরায় লাকী বেগম বাড়িতে এসে সুদসহ ১ লাখ ৩ হাজার টাকা দাবি করেন। অন্যথায় রানী বেগমকে মারধর করা হবে জানান। এ ঘটনায় তিনি ফতুল্লা থানার দ্বারস্থ হন।
বাড়িতে না থাকায় এ বিষয়ে লাকী বেগমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।