নাটোরের হরিশপুরে রান্না করার সময় তরকারিতে তেল বেশি দেওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্ত্রী মুক্তি বেগমকে (৩০) কুপিয়ে হাতের সাতটি আঙুল কেটে দিয়েছে স্বামী আব্দুল হাই। আহত মুক্তি বেগমকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত রবিবার (২৪ জুলাই) দুপুর ১ টার দিকে সদর উপজেলার বড় হরিশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
গ্রামবাসী জানান, ১৩ বছর পূর্বে ঐ গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে আব্দুল হাই পূর্বের তিনটি বিয়ের কথা গোপন রেখে সদর উপজেলার আটঘরিয়া গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদিনের মেয়ে মুক্তি বেগমকে বিয়ে করে। তাদের বৃষ্টি (১১) ও স্বাধীন (৮) নামের দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আব্দুল হাই স্ত্রী মুক্তি বেগমকে অমানুষিক অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছিল।
তারপর সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি মুখ বুঝে সহ্যা করে আসছিল। রবিবার দুপুর ১ টায় তরকারি রান্না করার সময় তেল বেশি দেওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আব্দুল হাই ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো হাসুয়া দিয়ে স্ত্রীকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে দুই হাতের সাতটি আঙুল কেটে দেয়। মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। স্বজনরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে অবস্থার অবণতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. রেজা উন নবী জানান, তার হাতের আঙুলের অবস্থা খুবই খারাপ। একটা হাত ভেঙে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করা না হলে আঙুলগুলো হারাতে হবে।
মুক্তি বেগম জানান, দুপুরে তরকারীতে বেশি তেল দিয়েছি বলে মারপিট করা শুরু করে। এক পর্যায়ে হাসুয়া দিয়ে আমার গলাকাটার চেষ্টা করলে আমি হাত দিয়ে বাঁধা দেয়। তারপরও এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। আমার মুখে হাসুয়া দিয়ে আঘাত করে। আমি দৌঁড়ে না পালালে আমাকে মেরেই ফেলতো। আমি এই পাষণ্ডের বিচার চাই।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ১১ বছরের কন্যা বৃষ্টি বলেন, আমি বাবার পা ধরে বলেছি, আব্বা মাকে ছেড়ে দাও। মরে যাবে। তবুও তিনি ছাড়েননি।
এদিকে স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার সাথে জড়িত স্বামী আব্দুল হাই এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানান, আব্দুল হাই ইতিপূর্বে আরও তিনটি বিয়ে করে। সে সব স্ত্রীরা অত্যাচার নির্যাতন সইতে না পেরে তাকে ছেড়ে চলে যায়। এই স্ত্রীও চলে গিয়েছিল বাপের বাড়ি। ঈদের আগে আব্দুল হাইয়ের অনুরোধে স্থানীয় কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি তাকে স্বামীর বাসায় ফিরিয়ে আনেন।
নাটোর থানার ওসি নাসিম আহমেদ জানান, ঘটনাটি জানার পর পরই আমি মুক্তি বেগমের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্ত আব্দুল হাইকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।